,

সিলেটে মৃত্যু ও শনাক্তে রেকর্ড

সময় ডেস্ক ॥ সিলেটে উৎকণ্ঠায় কাটে দিন-রাত। বাসায় থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে এই উৎকণ্ঠা বেশি। কারণ চিকিৎসাসেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটলেও মিলেনি একটি বেডও। অক্সিজেন তো দূরের কথা এখন অক্সিজেন সংবলিত বেডই পাওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। নানা চেষ্টা, তদবিরেও মিলছে না বেড। অন্যদিকে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সিলেটে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তে রেকর্ড ছুঁয়েছে। করোনাকালের ১৬ মাসের মধ্যে সিলেটে শনিবার রাত-দিন ছিল ভয়ঙ্কর দিন। এদিন সিলেটে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এ ছাড়া সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ৬৮১ জনের। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এ রিপোর্টে উদ্বিগ্ন। মৃত্যু ও শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি বলতে পারছেন না কেউ। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। রাত হলেই রোগীর ভিড় বাড়ে এই হাসপাতালের ফটকে। সিলেটের দূর-দূরান্ত থেকেও রোগী নিয়ে আসেন স্বজনরা। একটি আইসিইউ বেডের জন্য চলে আহাজারি। ওসমানীতেও ভিড় জমান স্বজনরা। দুটি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ কিংবা অক্সিজেন বেডের জন্য ছুটাছুটি করলেও বেড পাওয়া যায় না। মৌলভীবাজার থেকে আসা এক রোগীর স্বজন কামাল আহমদ শনিবার রাতে জানিয়েছেন- এম্বুলেন্স নিয়ে তারা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটাছুটি করেন। শেষ পর্যন্ত কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলেও কোথাও মিলেনি আইসিইউ। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য রেখেছেন। কয়েকজন রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, রাতে এম্বুলেন্সে অক্সিজেন সাপোর্টে রেখে তারা রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেন। কিন্তু কোথাও ভর্তির সুযোগ নেই। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালেই রোগী ভর্তি। এই অবস্থায় গাড়িতেই থাকতে থাকতে রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। তারা জানান, অনেক রোগী অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য হাসপাতালে ছুটাছুটিও করেন। ধীরে ধীরে অক্সিজেন সাপোর্ট পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- গত ১৭ দিনে সিলেটে কয়েক হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীই বাড়িতে থেকে সুস্থ হচ্ছেন। মাত্র ১০ ভাগ রোগী হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। যাদের অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি প্রয়োজন কেবল তারাই হাসপাতালে আসেন। কিন্তু সিলেটে করোনা চিকিৎসার পরিধি ক্রমেই সংকোচিত হয়ে এসেছে। এখন প্রতিটি সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ সবখানেই ধারণ ক্ষমতার বেশি সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকায় অধিক সংখ্যক রোগীকেও ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য বেশি রোগী হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। অনেকেই আবার শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসেন। এ কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। তবে এই চাপকে সামাল দেয়া হচ্ছে। রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে এবং সুস্থও হচ্ছে। সুস্থতার হার অনেক বেশি।’ এদিকে- শনিবার দিন-রাত ছিল সিলেটবাসীর জন্য উৎকণ্ঠার একটি দিন। একদিনে মৃত্যু ও শনাক্ত আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। ৫০ শতাংশের উপরে চলে গেছে শনাক্তের হারও। স্বাস্থ্য বিভাগের গতকালের তথ্যে জানা গেছে, সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেটে ৬৮১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন রোগী। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ২২৫ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া বিভাগে সুনামগঞ্জ জেলার ৯৮ জন, হবিগঞ্জের ১০৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা ১৮৮ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৬৫ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেটে একই সময়ে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ১১ জনই সিলেট জেলার ও একজন মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে বিভাগে মৃত্যুবরণ করা মোট রোগীর সংখ্যা ৫৭০ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ৪৫৮ জন, সুনামগঞ্জে ৪২ জন, হবিগঞ্জে ২৬ জন, মৌলভীবাজারে ৪৩ জন ও সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন। সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩১ জন। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৯৮ জন, সুনামগঞ্জে ৪৩ জন, হবিগঞ্জে ৬৫ জন ও মৌলভীবাজারে ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগী বৃদ্ধির বিবেচনা মাথায় রেখে তারা প্রতিদিনই বাড়াচ্ছেন আইসিইউ বেড। এখন প্রায় ১০০টি আইসিইউ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অক্সিজেন সরবরারের চিন্তা করে তারা অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর