,

নবীগঞ্জে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার স্টাটাসকে কেন্দ্র করে হিন্দু যুবককে মারধর, দোকান-বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত গয়াহরি গ্রামে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অর্পন চন্দ্র দেব (৩৩) নামে এক হিন্দু যুবকের দোকান ও বাড়ি ঘরে হামলা করে ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ ইসলামি মৌলবাদী জামায়েত শিবিরের কর্মীরা। হামলাকারীরা ওই যুবকের বাড়ি ছাড়াও অরো কয়েকটি বাড়িতে হামলা করে। ভাংচুর-লুটপাটের সময় বাধা দেওয়ায় ছোট ভাই রাজন দেব সহ অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস প্রকাশ করে তা এলাকার বিভিন্ন ফেসবুক ম্যাসেনঞ্জার ও হোয়ার্সআপে প্রচার করার অভিযোগে গত বুধবার (০৮ ই জুন) সন্ধ্যা ৭টায় নবীগঞ্জ পৌরসভার গয়াহরি গ্রামের হিন্দু যুবক অর্পন চন্দ্র দেবের নবীগঞ্জ বাজারের শেরপুর রোডের অর্পন ইঞ্জনিয়ারিং ওর্য়াকশপে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ ইসলামি মৌলবাদীরা। ওই স্ট্যাটাসের জের ধরে অর্পন চন্দ্র দেবের গয়াহরি গ্রামের বাড়িতে তা পরিবারের লোকদের উপর অর্তকিত হামলা করে মৌলবাদীরা। হামলাকারীরা এ সময় তার দোকান ভাংচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া বাড়িঘর ভাংচুর করে সোনাদানা ও টেলিভিশনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়। এ সময় আশে পাশের অর্ধ শতাধিক মানুষকে বেধড়ক পেটায় ইসলামী মৌলবাদী জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। এদিকে মৌলবাদীরা তাকে বাড়ীতে খুঁজতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাড়ী-ঘর ভাংচুর করে। এ সময় এতে বাধা দেয়ায় পাশ্ববর্তী নারায়ন দাশ, রঞ্জিত ধর, অনু দেব, অবিনাশ দেব ও বিজয় রায়ের বাড়িতে ভাংচুর চালায় হামলাকারীরা। তখন তাদের হামলায় অর্পন চন্দ্র দেব (৩৩), তার ছোট ভাই রাজন দেব (২৫), প্রতিবেশী অলি দেব (২৫), অপু দেব (৩০), অখিল দেব (৩৫), রাহুল ধর (৩২) ও সঞ্জিত রায় (৩৫) কে গুরুতর আহত অবস্থায় নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিকে আহত অর্পনকে তার প্রতিবেশী মহেশ বৈদ্য উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এই ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ই জুন) রাত ৮টায় মসজিদ কমিটির সদস্য তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে আর্পন চন্দ্র দেবের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেছেন। এদিকে হামলার সাথে জড়িত কাউকে আটক না করে উল্টো অর্পনের পিতা অরুণ চন্দ্র দেবকে আটক করে নিয়ে যায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু জনসাধারণের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অর্পন চন্দ্র দেব সেল ফোনে দৈনিক হবিগঞ্জের সময়কে জানান, ফেসবুক ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ তার উপর দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ফেসবুক সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনাই নাই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এদিকে পুলিশের কোন সহযোগিতা না করে উল্টো তাকে গ্রেফতারের চেষ্ঠা চালাচ্ছে। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর ভয়ে চরম নিরাপত্তাহীতায় ভুগছেন বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ জামায়াত ইসলামির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ আশরাফ আলীর দাবি, তাঁদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে একটি পক্ষ হিন্দু যুবকের বাড়ী ও দোকানে হামলা চালায়। যারা এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তিনি তাদের বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, নবীগঞ্জে একটি অনাকাংতি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অসহযোগিতা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রশাসন অর্পন চন্দ্র দেবের পরিবারের পাশে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নবীগঞ্জ ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কালি পদ ভট্টাচার্য বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের নীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এই ঘটনা। তিনি সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর