,

যুক্তরাজ্যে থিয়েটারে বাংলাদেশে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করলেন নবীগঞ্জের সুদীপ চক্রবর্তী

সলিল বরণ দাশ ॥ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নবীগঞ্জের কৃতিসন্তান সুদীপ চক্রবর্তী যুক্তরাজ্যে কৃতিত্বের সহিত পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। গত ২১ আগস্ট ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। জানাযায়, গত ২১ আগস্ট শনিবার ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপকের সাথে তিনঘন্টার আলাপ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং চল্লিশ মিনিটের বিরতি শেষে সুদীপ চক্রবর্তী থিসিস, প্র্যাকটিস ও মৌখিক পরীায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাকে সফলতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। সুদীপ চক্রবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি পারফর্মিং দ্য নেশন: বাংলাদেশ পরিচয়, সহিংসতা এবং বহুত্বের অনুসন্ধান বিষয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সুদীপ চক্রবর্তী একজন প্রশংসিত ও বহুমুখী নাট্যশিল্পী, শিক্ষক, সেই যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সফল হয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং পূর্ণ আন্তরিকতার মাধ্যমে তাদের আবেগকে অনুসরণ করতে চান। তাঁকে যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ২০১৭ সালে প্রদান করা হয়েছে। থিয়েটারে পিএইচডি পড়ার জন্য বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি এই বৃত্তি পেয়েছেন। সুদীপ চক্রবর্তী গোল্ডস্মিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরম্যান্স বিভাগে ‘পারফর্মিং বাংলাদেশ, আইডেন্টিটি, হিন্টস অ্যান্ড কনসিলিয়েশন ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৩ সাল নিয়ে গবেষণা করেছেন। সুদীপ চক্রবর্তী হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের শেরপুর রোডস্থ শিবপাশা গ্রামে ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের প্রয়াত বিমল চক্রবর্তীর সন্তান ও নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হরেকৃষ্ণ চক্রবর্তীর ভাতিজা সুদীপের বেড়ে ওঠা নবীগঞ্জ শহরে। নবীগঞ্জ কলেজ এ পড়াকালীন সময় থেকেই থিয়েটার এবং সাংস্কৃতিক চর্চার প্রতি তিনি ঝোঁক অনুভব করেছিলেন। থিয়েটার জগতে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ‘থিয়েটার শাখাবরাক’ নামে একটি স্থানীয় নাট্যদল থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার সঙ্গীত বিভাগে (বর্তমানে থিয়েটার ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ) নথিভুক্তির সাথে থিয়েটার চর্চা সম্পর্কে সুদীপ চক্রবর্তীর আবেগ বাস্তব রূপ নেয়। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে ¯œাতক ¯œাতকোত্তর উভয় ডিগ্রী সমাপ্তির পর সুদীপ চক্রবর্তীকে ২০০৬ সালে খ-কালীন শিক হিসাবে তার বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে ২০০৮ সাল থেকে পূর্ণকালীন অনুষদ সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গত সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে জুলাই/২০১৭ পর্যন্ত। তরুণ মনের লালন পালনের পাশাপাশি সুদীপ চক্রবর্তী কর্মশালা পরিচালনা এবং নাটক পরিচালনা, পরিকল্পনা ও গবেষণায় আগ্রহ দেখান। গত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশ, ভারত, দণি কোরিয়া, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অসংখ্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক থিয়েটার কর্মশালা, সেমিনার এবং উৎসবের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, যা তাকে নতুন এবং বৈচিত্র্যময় শিল্প ফর্মগুলি অন্বেষণ করতে পরিচালিত করে। সুদীপ চক্রবর্তী পরিচালিত ২৫টি থিয়েটার প্রযোজনার মধ্যে চাকা, মহাজনের নাও, লাল জমিন, রক্তকরবী, দক্ষিণা সুন্দরী এবং ম্যাকবেথ অন্যতম। এছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ৫০টিরও বেশি নাটকের জন্য তিনি মঞ্চ, আলো, পোশাক, প্রপস, মাস্ক এবং আরও অনেক কিছুর পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন। যুক্তরাজ্যের ২০তম কমনওয়েলথ গেমস, কন্টাক্ট থিয়েটার ফেস্টিভাল, বাংলা নাটকের তুলনামূলক আলোচনা, দণি কোরিয়ার কেওচাং উৎসব, ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি মঞ্চে তাঁর নাট্য নির্দেশনাগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং প্রদর্শিত হয়েছিল। সুদীপ চক্রবর্ত্তীর গবেষণা কাজগুলি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর