,

হবিগঞ্জে চিরকুট লিখে লিবিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা!

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতন ও নিজের দুই শিশু সন্তানকে স্বামীগৃহে আটকে রেখে বিতাড়িত করে দেয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে করেছে বলে ধারণা লিবিয়া প্রবাসীর স্ত্রী জলি বেগম (২৮) এর পরবারের। হবিগঞ্জ শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কের এক বাসায় নিজের নানির কাছে এসে আত্মহত্যা করেন জলি। হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ জলির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের শাহ কদ্দুছ আলীর কন্যা জলি বেগমকে ২০০৯ সালে একই উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মরহুম এলাছ মিয়ার ছেলে নজরুল আমিনের কাছে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন অনেকটা সুখেই চলছিল। এরই মধ্যে জলি গর্ভে মাহিয়া আক্তার ও মরিয়ম বেগম নামের দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে মাহিয়ার বয়স ৭ বছর ও মরিয়মের বয়স ৫ বছর। কিচুদিন পূর্বে পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তার শাশুড়ি, ভাসুর নূরুল আমিন তাকে গালি-গালাজ করতো। এ বিষয়টি জলি স্বামী নজরুলকে ফোন করে জানালেও নজরুল কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে উল্টো নিজের স্ত্রীকে ফোনে গালি-গালাজ করতো। গত ৬ সেপ্টেম্বর জলির শাশুড়ি ও ভাসুর নূরুল আমিন তার সাথে ঝগড়া করে। পরবর্তীতে জলির ভাই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বোনকে নিয়ে আসে। এ সময় জলি তার দুই মেয়েকে সাথে আনতে চাইলে নূরুল আমিন জোরপূর্বক তাদের আটকে রাখে বলে জানানয় জলির পরিবার। জলি সেখানে কিছু সময় কান্নাকাটি করে তার ভাইয়ের সাথে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসে। ওইদিন জলি হবিগঞ্জ শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কের সালমা কুঠিরে তার নানির কাছে আসে। পরে ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে জলি তার নানির সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতের কোন এক সময় বাসার সিলিং ফ্যানের মধ্যে ওড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করে জলি। সকালে জলির নানি ঘুম থেকে উঠে দেখেন জলি তার পাশে নেই। এ সময় তিনি খোঁজাখুজি করে বাসার ২য় তলায় একটি খালি রুমে সিলিং ফ্যানের মধ্যে জলির ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। এ সময় তিনি ওই রুমে জলির আত্মহত্যার পূর্বে লেখা একটি চিরকুট দেখতে পান।
এ সময় জলির নানি তার পাশে একটি চিরকুট দেকতে পান। চিরকুটে লেখা “থানার স্যার। তারিখ ০৭/০৯/২০২১ ইং। প্রিয় স্যার আসলামু আলাইকুম, পত্রের আমার সালাম নিবেন। ৬ তারিখ গেছলাম আমার ২টা বাচ্চাদের কারণে। তার বাবা বিদেশ। আমার কাছে আমার বাচ্চাদের দেয় না। তার উপুর কাছে আমার ২ বাচ্চা তাকে। বাচ্চা অনেক কান্না কাটি করছে আমার কাছে আসার লাগি। আমি যদি মারা যাই তাহলে তার দায় নেবে মোঃ নূরুল আমিন। ইতি জলি বেগম।”
পরবর্তীতে জলির নানি এ বিষয়টি তার আত্মীয় স্বজনকে অবগত করেন। তার আত্মীয় স্বজনরা সদর থানা পুলিশকে সংবাদ দেন। পরবর্তীতে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনা¯’লে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে জলিদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী জানান, মেয়েটির লাশ উদ্ধার করেছি। মেয়েটি কি কারণে মারা গেছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্টেই জানা যাবে। তবে মৃত্যুর পূর্বে লেখা মেয়েটির একটি নোটবুক পেয়েছি। সেই লেখাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা।


     এই বিভাগের আরো খবর