,

হবিগঞ্জে আলোচিত ভূয়া কবিরাজকে কারাগারে প্রেরণ, সংবাদ প্রকাশের পর ভোক্তভূগীরা থানায় ও র‌্যাব কার্যালয়ে

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ জেলার আলোচিত ভূয়া কবিরাজ মোঃ আহাদুর রহমান আহাদ মোল্লা (৩৫) কে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে, সংবাদ প্রকাশের পর আরো ভোক্তভূগীরা থানায় এবং র‌্যাব অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে ভোক্তভূগী সৃহবধু বানিয়াচং উপজেলার আতুকুরা গ্রামের মালদীপ প্রবাসি সোহেল মিয়ার স্ত্রী ও বানিয়াচং উপজেলার রাঙ্গাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিনের কন্যা রোকসানা আক্তার রতœা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার অপর আসামী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ররফে জীন মোল্লাকে খুজছে পুলিশ। আহাদ আটকের পরই সে আত্মগোপন করে। শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব-৯ ইমাম বাড়ি বাজারের আস্থানা থেকে আটক করা হয়েছে। আটক করার পর বহু অপকর্ম র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। সে বানিয়াচং উপজেলার কুশা কাগাউড়া গ্রামের ছুল্লুক মিয়ার পুত্র মোল্লা আহাদ ১৯৮৮ সালে জন্ম গ্রহন করে এবং ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করে। এক সময় সে বিভিন্ন হোটেলে বয়ের চাকরি করে সংসার চালাতো। বিভিন্ন ইউটিউবে ভিডিও দেখে জিনের বাদশা ও ভন্ড কবিরাজ সেজে যায়। তাকে সহযোগীতা করে ইমাম বাড়ি বাজারের আরেক ভন্ড কবিরাজ শাহ নাছির চৌধুরী ওরফে জিন মোল্লা বিলাশ বহুল আস্থানা তৈরী করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা বিভিন্ন যানবাহনে এবং মিডিয়ায় চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে সোর্সের মাধ্যমে মক্কেলদের ধরে এনে প্রেম ভালবাসা, স্বামী স্ত্রী অমিল, মামলা মোকদ্দমা জয়, সন্তান ধারণসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে আহাদুল ও জিন মোল্লা নাছির উদ্দিন শূণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। সম্প্রতি বানিয়াচং উপজেলার রাঙ্গাহাটি গ্রামের এক প্রবাসির স্ত্রী ভূয়া কবিরাজ আহাদের কাছে যায়। সে জিনের হাজিরার কথা বলে তার কাছ থেকে একটি ছাগল, ১ হাজার ১ টাকা ও ৫ কেজি মিস্টি নেয়। পরেরদিন রাত ১২ টা ১ মিনিটে জীনের হাজিরা বসায়। এসময় জীন এসে বলে তার স্বামীকে বিদেশ থেকে এনে দিলে নগদ ২ লাখ টাকা দিতে হবে। ওই সৃহবধু যদি শনি কিংবা মঙ্গলবার রাত ১২ টার সময় ভন্ড কবিরাজ আহাদের কাছে ২ লাখ টাকা দেয় তা হলে জীন এক সপ্তাহের মধ্যে তার স্বামীকে এনে দিবে। ওই মহিলার স্বর্ণালংকার ও ব্যাংকের টাকা তুলে আহাদকে ২ লাখ টাকা দেয়। এক সপ্তাহ পর তার স্বামী ফিরে না আসায় ওই মহিলা আহাদকে জিজ্ঞেস করলে আহাদ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তার সাথে শাররীক সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে তাকে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাক মেইল করতে থাকে। এক পর্যায়ে ব্ল্যাক মেইলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সে। ওই মহিলা চক্ষু লজ্জায় এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়। আবার কেউ কেউ থানায় মামলা দিয়েও কোন প্রতিকার পায় না। আটক আহাদ জানায়, রোকসানা আক্তার রতœার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একদিন রোকসানা তার মাকে নিয়ে আহাদের বাড়িতে উঠে এবং তাকে বিয়ের চাপ দেয়। কিন্তু রোকসানা ও বিবাহিত আহাদ ও বিবাহিত। দুজনেরই সন্তানদের দিক বিবেচনা করে রোকসানাকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানায়। এক পর্যায়ে রোকসানা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টার হুমকি দিলে আহাদ বিয়েতে রাজি হয়। এবং তারা দুজনই হবিগঞ্জ কোর্টে আসে। কিন্ত রোকসানার ন্যাশনাল কার্ড না থাকায় কোর্ট তাদের বিয়ে করাতে রাজি হয়নি। অবশেষে তারা যার যার বাড়িতে চলে যায়। গত বুধবার রোকসানা তার স্বামীর বাড়ি আতুকুরা গ্রামে ন্যাশনাল কার্ড আনতে যায়। এসময় স্বামী তাকে আটক করে। কিন্তু রোকসানা আহাদকে ফোন দেয়। বিষয়টি রোকসানার স্বামী সোহেল জানতে পেরে মোবাইল ফোনে আহাদের সাথে কথাকাটাকাটি করে। এক পর্যায়ে আহাদ ও রোকসানার আন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও সোহেলের মোবাইলে দিয়ে দেয়। সোহেল ভিডিওটি দেখে রোকসানাকে মারধোর করে। এক পর্যায়ে রোকসানাকে বাধ্য করে র‌্যাব অফিসে অভিযোগে দিয়ে আহাদকে আটক করায়। নবীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত আমিনুল ইসলাম জানান, রোকসানা বাদী হয়ে আহাদসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে। তদন্তে মুল রহস্য বেরিয়ে আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর