,

হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালালদের আখড়ায় পরিণত

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকরা এখানে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, এখানে দালাল ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করা খুবই কঠিন। লম্বা লাইন করে ফাইল জমা নেয়ার নামে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশে সম্মুখেই নামে বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ট্যাভেলস। যাদের নেই কোনো সঠিক কাগজপত্র। ট্যাভেলসের কার্যক্রম না করে অধিকাংশই করছে দালালি। এগুলোতে রয়েছে পাসপোর্ট ফরম পূরণের জন্য একটি কম্পিউটার। সম্প্রতি এ সব ট্যাভেলস থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তার জাল সিলসহ বেশ কয়েকজন ট্যাভেলস মালিককে আটক করে। এরপর থেকে কিছুদিন তাদের দালালি বন্ধ থাকে। আবার আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় তারা এসব ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশের শুরু থেকেই জমা দিতে হয় দালাল ধরে। অনেকেই আগের রাতে লাইনে দাড়াতে সিরিয়ালের জন্য দালালদের কাছ থেকে টোকেন নিচ্ছেন। টোকেন দিচ্ছে ওই এলাকার স্থসানীয় কতিপয় টোকাই, নেশাখোর যুবকরা। এর বিনিময়ে নেয়া হচ্ছে ৫শ থেকে হাজার টাকা। অনেকেই স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি সিরিয়াল বুকিং দিয়ে রাখে। তাদের সহযোগিতা করছে অফিসের কতিপয় গেইটম্যান ও এক আনসার সদস্যরা। শুধু তাই নয়, দালাল না ধরলে অফিস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বেশ কয়েকদিন হয়রানি করে ফিরিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই সকল ভুক্তভোগীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ওই ট্যাভেলস গুলোর মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়ে থাকেন। একটি পাসপোর্ট করতে ট্যাভেলসগুলো ৫ থেকে ৬ হাজার, ভুল হলে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। ওই ট্যাভেলসগুলো রয়েছে শ্রেণিভিত্তিক দালাল। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ওই দালালরা তাদের নিয়োজিত ট্যাভেলস এজেন্সিতে পাসপোর্ট গ্রাহকদের নিয়ে আসে। ওই ট্যাভেলসগুলোর রয়েছে ফাইলের ওপরে বিভিন্ন সংকেত। এই সংকেত দেখে প্রতিদিন রাতের বেলা ট্যাভেলস দালালরা হিসাব করে টাকা দিয়ে আসে। তারা ভেরিফিকেশনের নামে নিচ্ছে ১৩শ টাকা ও পাসপোর্ট অফিসের নামে ১৩শ টাকা, পাসপোর্ট বেকেন্ড ও ইয়াফিস হলে ৪০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। ওই দালালরা পাসপোর্ট অফিসের সম্মুখে লক্ষ লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে দোকানের মাধ্যমে এই প্রতারণা করে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসোহারা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু সদস্যরা অভিযান করলেও আবার তারা তাদের সাথে যোগাযোগ করে ম্যানেজ করে নেয়। মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলার প্রধানরা পরিদর্শন করলে শুরু হয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দালালদের দৌড়ঝাপ। এরপর অফিসের ম্যানেজমেন্ট সঠিক দেখিয়ে সার্ভার ডাউন ও অফিসের স্টাফ কম দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক গ্রাহকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত গ্রাহকরা কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য লাইনে না দাড়িয়ে জট পাকিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলেও কোনো কর্মচারীকে দেখা যায়নি। প্রকাশ্যে হবিগঞ্জ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মকান্ড করে জনসাধারণকে বুঝাচ্ছে প্রশাসন তাদের হাতের মুঠোয়। অতি শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দিন দিন দালালদের জিম্মায় চলে যাবে হবিগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এ ছাড়া সম্প্রতি র‌্যাব অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালাল ধরে ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড প্রদান করেন। এরপরও দেদারছে দালালরা বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সহজ সরল মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।ভুক্তভোগীদের দাবি অচিরেই যেনো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর