,

স্বজনদের অভিযোগ, নার্স শামীমা ও বিথী’র গাফিলতির কারণে এ ঘটনা

সদর হাসপাতালে নবজাতক চুরির ঘটনায়
এক পিতার মামলায় অপর পিতা কারাগারে

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে চুরির পর নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় চুরির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিবপাশা গ্রামের বাসিন্দা মহি উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র মাসুম চৌধুরী (২৫) কে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মরড়া গ্রামের আছকির মিয়ার পুত্র দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে নবজাতক চুরির অভিযোগে মামলা করেন। মামলার পরপরই মাসুম চৌধুরীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে শিবপাশার নবজাতকের অভিভাবকরা বরাবরের মতো স্ক্যুানো ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স শামীমা আক্তার ও বিথী আক্তারকে কর্তব্যে অবহেলার জন্য দায়ী করছেন। তাদের মতে, স্ক্যুানো ওয়ার্ডে ৮ জন নবজাতক থাকার কথা থাকলেও রাখা হয় ৪৫টি। কোনো চিহ্ন না থাকায় কার নবজাতক কোনটি চেনা যায় না। ফলে ভুলবশত এমনটা হলেও অদৃশ্য কারণে শায়েস্তাগঞ্জের নবজাতকের পিতা চুরির মামলা দায়ের করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ২৪ জানুয়ারী রাতে বিভিন্ন সময়ে উভয় নবজাতকের মা প্রসব ব্যাথা নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। গত মঙ্গলবার ২৫ জানুয়ারী ভোরে হাসপাতালে একটি ছেলে নবজাতকের জন্ম দেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মড়রা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ফেরদৌসী আক্তার। এর আধঘণ্টা পরে সেখানে আরেকটি মেয়ে নবজাতকের জন্ম দেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের মাসুম চৌধুরীর স্ত্রী আকলিমা। ঠান্ডাজনিত কারণে (স্ক্যানুতে) রাখা হয় দুইটি নবজাতককে। মায়েরা ভর্তি ছিলেন হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে। সকাল ৮টায় মাসুম চৌধুরী তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য স্ক্যানু থেকে মায়ের কাছে আনতে যান। এ সময় তিনি নিজের মেয়ে নবজাতককে না এনে নিয়ে আসেন ফেরদৌসী আক্তারের ছেলে নবজাতকটিকে। কিছুণ পর ফেরদৌসির স্বজনরা তাদের নবজাতক আনতে গেলে দেখেন তাদের বাচ্চাটি নেই। এরপর তারা চিৎকারসহ কান্নায় ভেঙে পড়েন ও বাচ্চা চুরি হয়েছে বলে হুলস্তুল শুরু করেন। বিষয়টি হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ডিবি, সিআইডি, সদর থানা পুলিশ, সাংবাদিক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা এনিয়ে উত্তেজনার পর বিকাল ৩টার দিকে ফেরদৌসীর মেয়ে বাচ্চাটিকে গাইনী ওয়ার্ডে মাসুমের স্ত্রীর কোলে পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে মাসুমের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, ভুলবশত হয়তবা এমনটি হয়েছে। তখন যার যার নবজাতককে তার তার হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ মাসুমের স্ত্রী আকলিমাকে ১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এর আগে সকালের দিকে নিখোঁজ শায়েস্তাগঞ্জের নবজাতকের নানি সফিনা ও ফুফু সামছুন্নাহার জানান, ভোর সাড়ে ৬টায় স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারির মাধ্যমে নবজাতকটি জন্ম নেয়। এরপর বাচ্চাটির কান্না থামছিল না। এক পর্যায়ে বিশেষ সেবা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে আসতে বলা হয়। ওষুধ নিয়ে যাওয়ার পর ঝাড়ু দেয়ার কথা বলে তাদের বের করে দেন দায়িত্বরতরা। পরে ভেতরে ঢুকে শিশুটিকে আর পাইনি। দায়িত্বরতরা জানায়, তার বাবা এসে দুধ খাওয়ানোর কথা বলে নিয়ে গেছে। অথচ এ সময় তার বাবা হাসপাতালে আসেনি। অথচ অভিযুক্ত নার্সরা তাদেরকে জানান, নবজাতকের বাবা নিয়ে গেছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে সদর হাসপাতালে। কিন্তু এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন নার্স ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এতে করে যে কোনো সময় আরও বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন অভিভাবকরা। নিখোঁজ হওয়া নবজাতকের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি বাড়িতে ছিলেন। ছেলে সন্তানের খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন সন্তান চুরি হয়েছে। এদিকে কারাগারে যাওয়া নবজাতকের পিতা মাসুম চৌধুরী জানান, তার ভাগ্য খারাপ। ভুলবশত এমনটা হলেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে নবজাতক চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে ওসি মাসুক আলী জানান, চুরির মামলায় মাসুম চৌধুরীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বিস্তারিত বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে।


     এই বিভাগের আরো খবর