,

হবিগঞ্জের এসপি ও ওসি সহ ৫৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি ও সদর থানার ওসি মাসুক আলীসহ ৫৪ পুলিশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা খারিজ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী মামলায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো উপাদান না থাকায় ফৌজদারী কার্যবিধি ২০৩ ধারায় খারিজ করে দেন। গত ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট শামছুল ইসলাম। মামলার অভিযোগে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুক আলী, ডিবি’র ওসি আল-আমিন, ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ, এসআই (নিরস্ত্র) নাজমুল হাসান, এএসআই আবু জাবের, এএসআই বাপ্পী রুদ্র পাল ও এএসআই আলমগীর হোসেনসহ ৫৪ জন পুলিশ সদস্য। মামলাটি বিচারক বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশের জন্য ৩ জানুয়ারি ধার্র্য্য করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি গত ২২ ডিসেম্বর একটি সমাবেশ আহবান করে। সমাবেশটি করতে হবিগঞ্জ পৌরসভার মাঠে ও চিলড্রেন পার্ক ব্যবহার করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয় নাই। এরই মধ্যে জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি সর্বমহলে প্রচারিত হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে শায়েস্তানগরস্থ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা বিএনপি। যথারীতি বিষয়টি লিখিতভাবে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। কিন্তু পুলিশ পার্টি অফিসের সামনে একটি ছোট মঞ্চ তৈরীর কাজে বাঁধা দেয় এবং গলির পূর্ব, পশ্চিম মুখে বেরিকেড দিতে শুরু করে। বেলা ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দ অর্থাৎ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি ও মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি ও চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল সহ কেন্দ্রীয় নের্তৃবৃন্দ সভাস্থলে উপস্থিত হন এবং সভাস্থলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশ হবিগঞ্জ শহরের সকল প্রবেশ মুখে চেক পোষ্ট বসিয়ে সভাস্থলে আসা নেতাকর্মীদের আটক ও হয়রানী করতে থাকে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ ও জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হাশিম পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী শান্তিপুর্ণভাবে পালন করার সুযোগ দেওযার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ অহেতুক উত্তেজিত ও মারমুখী আচরণ শুরু করে এবং সভাস্থলে জনতার আসা বন্ধ না হলে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, সদর থানার (ওসি) মাসুক আলীর নির্দেশে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক পুলিশ সমাবেশস্থলের সামনে ছাত্রদলের মিছিলে গুলি বর্ষন শুরু করে। পুলিশের গুলিতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়ে মাটিতে লুটাইয়া পড়ে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজীব আহম্মেদ রিংগনের শরীর ঝাঝরা হয়ে যায়। তার সারা শরীরে শতশত স্প্রীন্টারের আঘাতে তবিত হয়। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের চোখে নষ্ট হয়ে যায়। গুলির আঘাতে হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর সফিকুর রহমান সিতু, আশরাফুল আলম সবুজ, ইয়ামিন মিয়া, তৌহিদুর রহমান অনি, নাজমুল হোসেন অনিসহ অনেকে গুরুতর আহত হয়। পুলিশের গুলিতে প্রায় ৩০০ (তিনশত) নেতাকর্মী আহত হয়। মামলার আসামীগণ বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে সর্বমোট ৭৫৪ টি শর্টগানের বা ৪৪৮ টি শর্টগানের শিশা এবং ৯০টি টিয়ার গ্যাস নিপে করে এবং তিনশত নেতাকর্মীকে আহত করে। যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর