,

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সংকটের মুখে হবিগঞ্জের চা শিল্প

সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর : হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার মধ্যে মাধবপুর, চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলা পাহাড়ি এলাকা। এসব পাহাড়ি এলাকাকে ঘিরে ছোট বড় মিলে ২৫টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে হবিগঞ্জের চারটি উপজেলায় ২৫টি চা বাগানের চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি না পাওয়ায় জেনারেটর চালিয়ে ও চায়ের কারখানা গুলোকে সচল রাখা যাচ্ছে না। শঙ্কা দেখা দিয়েছে চায়ের গুণগত মান নিয়ে। যার প্রভাব পড়বে চায়ের রপ্তানি বাজারে। জানা যায়, সারাদেশে ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে শুধু হবিগঞ্জের ৪টি উপজেলা মধ্যে মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জ রয়েছে ছোট বড় মোট ২৫টি চা বাগান। দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও চা রপ্তানি করা হয়। চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচন্ড খরার কারণে রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চা গাছ। যে বাগান থেকে দিনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কেজি পাতা তোলা হয়, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিংয়ের কবলে ব্যবহার করতে হচ্ছে জেনারেটর। পাশাপাশি সরকার জ্বালানি তেলের কৃচ্ছসাধন নীতি প্রয়োগ করায় জেনারেটর চালানোর জন্য পর্যাপ্ত ডিজেল ও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চা বাগানের কারখানা গুলো ২৪ ঘন্টা চালু রাখা যাচ্ছে না। এতে করে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুনগত মান। চুনারুঘাট উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসময় তাদের বাগানে দিনে ৪০ হাজার কেজির বেশি পাতা উৎপাদন হওয়ার কথা, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। একই অবস্থা ভ্যালির আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চন্ডিছড়াসহ অন্যান্য বাগানে। ছোট বাগানগুলোতে উৎপাদনের অবস্থা আরও খারাপ। গত জুন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও লোডশেডিং হচ্ছে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা। এর প্রভাব পড়েছে চা শিল্পে। অধিকাংশ চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এছাড়া বার বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগত মান। জেনারেটর ব্যবহার করলে এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিকটবর্তী ঐতিহ্যবাহী দেউন্দি চা বাগানের ডিজিএম এবং জেনারেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশে হঠাৎ করে লোডশেডিং তীব্র হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। প্রতি বৎসর জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চা উৎপাদনের মৌসুম। এই মৌসুমে প্রতিটি চা বাগানের কারখানাতে ক্ষেত্র ভেদে ৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার কেজি চা পাতা আসে প্রক্রিয়া জাত করণ। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে এই কাঁচা চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে চা বাগান কোম্পানী মালিকরা। লাল চান্দ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেন ও নোয়া পড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ বলেন, হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ এর বিদ্যুৎ চা বাগানে ব্যবহার করি কিন্তু প্রতিদিন লোডশেডিং কারণে আমাদের চা বাগান সহ সকল চা বাগান মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এদিকে লোডশেডিং কারণে খরচ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ যখন চলে যায়, তখন চা বাগানের জেনারেটর চালানো হয়। জেনারেটর চালানো জন্য প্রয়োজন হয় ডিজেল। ডিজেল প্রতি লিটার ৮৫ থেকে ১শ টাকা করে ক্রয় করতে হচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়ানো হলেও চায়ের দাম কিন্তু সে ভাবে বাড়েনি যে কারণে জেনারেটর চালিয়ে ও উৎপাদন ঠিক রাখতে পারছি না। এখন এই সমস্যা জন্য চায়ের গুনগত মান যদি কমে যায়, তাহলে চায়ের মূল্য কমে যাবে। চায়ের গুনগত মান খারাপ হলে রপ্তানি বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। খারাপ মানের কোনো চা বিশ্ব বাজারে বিক্রয় করা সম্ভব না। আর বিক্রয় করলেও সেই চা ফেরত আসবে। যার ফলে দেশের চায়ের রপ্তানি বাজার ও চা শিল্প দুটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর