,

৮ শিশু সন্তানসহ ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে বেকায়দায় বাহুবলে সংঘর্ষে নিহত দুলাল মিয়ার স্ত্রী আমিনা খাতুন

নূরুল ইসলাম মনি, বাহুবল : বাহুবলে সংঘর্ষে নিহত দিনমজুর দুলাল মিয়ার বৃদ্ধ মা ও ৮ শিশু সন্তানসহ ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন গৃহবধূ আমিনা খাতুন। নিজের বয়স ত্রিশ পেরোতে না পেরোতেই বৈধব্যের পাশাপাশি গলায় ঝুঁলেছে স্বামীর রেখে যাওয়া পরিবারটি। স্বজন-শুভাকাঙ্খিদের সহায়তায় এখন এ পরিবারের চুলায় আগুন জ্বললেও ভবিষ্যতের দিনগুলো কী করে চলবে- তা জানেন না এ দরিদ্র বিধবা নারী। গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংঘর্ষের ঘটনায় ভিটা-মাটিহীন এ বড় পরিবারটির একমাত্র উপার্জনকারী গৃহকর্তা দুলাল মিয়া নিহত হন। নিহত দুলাল মিয়া উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস মিয়ার পুত্র।
জানা যায়, উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের মৃত মনছুব উল্লার পুত্র প্রবাসী শাহেদ আলীর বাড়ির সামনে পুকুরের পাড়ের দুইটি বাঁশ গত ১১ জুলাই এক ঝড়ে ভেঙে গোসাই বাজার-ফতেহপুর পাকা রাস্তায় পড়ে। এতে জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্ট হওয়ায় একই গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র জুলহাস মিয়া নিজ উদ্যোগে শাহেদ আলীর পরিবারের অনুমতি নিয়ে বাঁশগুলো কেটে ফেলেন। এতে প্রবাসী শাহেদ আলীর গোষ্ঠীর লোকজন জুলহাস মিয়া ও তার গোষ্ঠীর লোকজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এ ঘটনার জের ধরে ১৪ জুলাই সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার সময় স্থানীয় গোসাই বাজারে উভয় পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এতে জুলহাস মিয়ার গোষ্ঠীর উল্লেখিত দুলাল মিয়া (৪০) নিহত ও উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুলাল মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ আমিনা খাতুন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ এজাহারভূক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
দুলাল মিয়া মরা যাওয়ার সময় স্ত্রী মোছাঃ আমিনা খাতুন, মা ঝলক চান ছাড়াও ৮টি শিশু সন্তান রেখে গেছেন। তারা হলো- রাজ মিয়া (১২), রাকিব মিয়া (১০), রাশেদ মিয়া (৮), সাইফুল মিয়া (৬), ফয়েজ মিয়া (৪), মার্জিয়া আক্তার (৩), মাহিয়া আক্তার (২) ও নেওয়াজ মিয়া (৩ মাস)।
সরজিমন নিহত দুলাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পক্ষকাল অতিবাহিত হলেও পরিবারটিতে কান্নার রোল থামছে না। মা ঝলক চান ছেলেকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রায় শয্যাশায়ী। নিহত দুলাল মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ আমিনা খাতুন সন্তানদের কথা চিন্তা করে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন মাস বয়সী সন্তান কোলে নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন ৮ অনাথ সন্তানের জননী মোছাঃ আমিনা খাতুন। তিনি জানান, তার স্বামীর ভিটাবাড়ি, জমিজমা কিচ্ছু নেই। নিত্য রোজগার দিয়েই পরিবার চালাতেন। এখন তিনি নেই, পরিবারের আয়ের চাকাও ঘুরছে না। ভবিষ্যৎ দিনগুলো কি করে চলবে- তিনি জানেন না। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। আঁচল দিয়ে চোখ মুছেন অনেকক্ষণ।
তিনি আরো জানান, নিহত দুলাল মিয়ার বোনের বসতভিটার একটি অংশে তারা ছোট্ট একটি টিনসেড ঘর তোলে বসবাস করছেন। দুই সদস্যের পরিবারের বসবাসের উপযোগী ঘরটিতেই স্বামীসহ তারা ১১ সদস্য বসবাস করতেন। ঘরটির চাল ভেঙে পানি প্রবেশ করছে, একদিকে হেলেও আছে, যে কোন সময় ভেঙে পড়বে। অভাবের কারণে জীবদ্ধশায় তার স্বামী ঘরটি মেরামত করতে পারেননি।
এ পরিবারের দুর্দশা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় সাতকাপন ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রেজ্জাক-এর সাথে। তিনি বলেন, নিহত দুলালের পরিবারটি খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। আমি পরিবারের সদস্যদের শান্ত্বনা ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি। ভিজিডি কার্ড, বিধবা ভাতা ও রেশন প্রদানের মাধ্যমে পরিবারকে পূনর্বাসনে সহায়তার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমি সরকার ও বিত্তবানদের এ অসহায় পরিবারটির পাশের দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, শুনেছি পরিবারটি দুর্দশায় আছে। খোঁজ-খবর নিয়ে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরিবারটির পূনর্বাসনে কী সহায়তা করা যায়- তা দেখছি।


     এই বিভাগের আরো খবর