,

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদকে দূতাবাস বানিয়ে অভিনব প্রতারণা :: আটক ৩

জাবেদ তালুকদার : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রতারণার অভিযোগে ৩ যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় স্লিপসহ বিভিন্ন ভোটার আইডি কার্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এমন প্রতারণা করতে গিয়ে আটক করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অপারেটরসহ ৩ জন। আটককৃতরা হলেন নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার জমশেদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩৫), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী (২৮)। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়- গত (৪ আগস্ট) থেকে নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে চলছিল নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। গতকাল শনিবার শেষদিনে অন্যান্য দিনের ন্যায় নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা জন্মনিবন্ধন নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর আংগুলের চাপ দিচ্ছিলেন ওই ইউনিয়নের নতুন ভোটাররা। এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ মিয়া নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের তথ্য অপূরণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমীকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের নতুন ভোটার করার জন্য আংগুলের চাপ গ্রহণ করেন। এরপর নেত্রকোনার ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের আংগুলের চাপ দেয়ার সময় অপরিচিত দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরী ও ৩ মহিলাকে আটক করা হয়। এ সময় মোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি ২২ জন নারীসহ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমশেদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩৫), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী (২৮)কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী জানান আমি ৩ বছর সৌদি আরবে ছিলাম, ১ বছর পূর্বে দেশে এসেছি। আবার আমাকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবু সুফিয়ান নামে এক দালাল ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেয়, সুফিয়ান জানায় সৌদি যেতে হলে অ্যাম্বেসিতে আংগুলের চাপ দিতে হবে। তাই সুফিয়ান তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক আমিসহ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন নারীকে আংগুলের চাপ দেয়ার জন্য সৌদি অ্যাম্বেসিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে এসেছে, আমি আংগুলের চাপও দিয়েছি। বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু মিয়া বলেন- বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য কয়েকজন দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আমার ইউনিয়নে নিয়ে আসা হয়, আংগুলের চাপ দেয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ অপরিচিত দেখে তাদেরকে আটক করে। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে অন্যান্য উপজেলার নাগরিকদের নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে নাগরিক করার জন্য ভোট তোলা হচ্ছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে এসে এর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি, বাউসা কেন্দ্রের টিম লিডার মতিউর রহমান বাদী হয়ে আটককৃত দালাল চক্র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে, আমাদের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন- যারা আজকে ভোটার হয়েছেন তাদের তথ্য অফলাইনে রয়েছে, উদ্ধার হওয়া স্লিপ এর সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী তথ্য যাচাই-বাছাই করে এগুলো বাদ দেয়া হবে, দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই। নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন- সৌদি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বাসিতে আংগুলের চাপ দেয়ার নাম করে একটি চক্র বিভিন্ন জেলা থেকে মহিলাদের বাউসা ইউনিয়ন অফিসের চলমান নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়ে আসে। এখানে নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে পর্যাপ্ত পরিমান প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়েই অন্যান্য জেলার মহিলাদের আংগুলের চাপ গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটরসহ ৩ জন প্রতারককে আটক করা হয়েছে, মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর