,

ইউনিয়ন পরিষদকে সৌদি দূতাবাস বানিয়ে অভিনব প্রতারণা :: নবীগঞ্জে কম্পিউটার অপারেটরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার : নবীগঞ্জ উপজেলার ৯নং বাউসা ইউনিয়ন পরিষদকে সৌদি দূতাবাস বানিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার দায়ে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা। নবীগঞ্জ থানা এলাকার ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০২২ এর টিম লিডার চুনারুঘাট উপজেলার লতিফপুর গ্রামের মৃত- নুর হোসেনের পুত্র মোঃ মতিউর রহমান বাদী হয়ে নবীগঞ্জ নির্বাচন অফিসের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার অপারেটর জমসেদ চৌধুরীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এমন প্রতারণা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অপারেটরসহ ৩ জন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের আঃ আজিজ চৌধুরীর পুত্র জমশেদ চৌধুরী (৩৭), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের অঅব্দুর রাজ্জাকের পুত্র আবু সুফিয়ান (৩৬), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলেপুর গ্রামের সোহেল চৌধুরীর পুত্র ফাহিম চৌধুরী (২৩)। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যেতে হলে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে দিতে হবে আংগুলের চাপ। গত শনিবার ৬ আগষ্ট আংগুলের চাপ দেয়ার শেষদিন তাই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২০-২৫ জন মহিলা আংগুলের চাপ দিতে আসছেন নবীগঞ্জ উপজেলার ৯নং বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে। ফরম ফিলআপের পর অধিকাংশ মহিলা দিয়েছেন আংগুলের চাপও। এভাবেই অভিনব কায়দায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সৌদি যেতে আগ্রহী নারীদের কাছ থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। গত শনিবার ৬ আগস্ট বিকেলে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এমন প্রতারণা করতে গিয়ে আটক করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অপারেটরসহ ৩ জনকে। জব্দ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের আংগুলের চাপ গ্রহণ পরবর্তী নতুন ভোটার হওয়ার ৬৫টি স্লিপসহ বিভিন্ন জাতীয় পরিচয় পত্র। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়- গত (৪ আগস্ট) থেকে নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে চলছিল নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। গত শনিবার (৬ আগস্ট) শেষদিনে অন্যান্য দিনের ন্যায় নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা জন্মনিবন্ধন নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর আংগুলের চাপ দিচ্ছিলেন ওই ইউনিয়নের নতুন ভোটাররা। এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ চৌধুরী নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের তথ্য অপূরণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমীকে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের নতুন ভোটার করার জন্য আংগুলের চাপ গ্রহণ করেন। এরপর নেত্রকোনার ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের আংগুলের চাপ দেয়ার সময় অপরিচিত দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরী ও ৩ মহিলাকে আটক করা হয়। এ সময় মোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি একাধিক নারীসহ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমশেদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী জানান- আমি ৩ বছর সৌদি আরবে ছিলাম। ১ বছর পূর্বে দেশে এসেছি। আবার আমাকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবু সুফিয়ান নামে এক দালাল ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেয়। সুফিয়ান জানায় সৌদি যেতে হলে অ্যাম্বেসিতে আংগুলের চাপ দিতে হবে। তাই সুফিয়ান তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক আমিসহ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২০ জন নারীকে আংগুলের চাপ দেয়ার জন্য সৌদি অ্যাম্বেসিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি আংগুলের চাপও দিয়েছি। নেত্রকোনার ফাহিমা আক্তার বলেন- আমি চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টেসে চাকুরী করি, সৌদি আরবে নেয়ার নাম করে সুফিয়ান নামে এক দালাল আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। গত শনিবার সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য আংগুলের চাপ দেয়ার শেষদিন এমন কথা বলে চট্টগ্রাম থেকে আমাকে এখানে আংগুলের চাপ দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে। ঝামেলার জন্য আমি আংগুলের চাপ দেইনি। রিমা বেগম বলেন সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমিসহ ২০ জন মহিলা সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা করে কয়েক লাখ টাকা সুফিয়ান তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর কাছে দিয়েছি। আজ শনিবার ফিঙ্গার দেয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা গ্রামের মানুষ আমরা তো আর বুঝিনি যে বিদেশের জন্য ফিঙ্গার দিতে এনে এখানে আমাদের নতুন ভোটার করাচ্ছে। বাহিরের জেলার কতজন আঙ্গুলের চাপ দিয়ে বাউসা ইউনিয়নের নতুন ভোটার হিসেবে সার্ভারের তথ্য গিয়েছে তা কিভাবে নির্ণয় করবে নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনায় তিনি জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান। বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু বলেন- বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য কয়েকজন দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আমার ইউনিয়নে নিয়ে আসা হয়। আংগুলের চাপ দেয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন অপরিচিত মুখ দেখে তাদেরকে আটক করেন। আমি আশা করি ওই ঘটনার সাথে যারা জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিক তদন্ত করে মূল হোতাদের বের করবেন। নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন- বাউসা কেন্দ্রের টিম লিডার মতিউর রহমান বাদী হয়ে আটককৃত ৩ জনসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিজ্ঞজনের মতে, কম্পিউটার অপারেটর জমসেদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে এর সাথে জড়িতদের নাম, উদ্ধার হবে এর রহস্য।


     এই বিভাগের আরো খবর