,

হবিগঞ্জে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট উল্টা পাল্টা :: রোগীরা পড়েন বিপাকে

সিভিল সার্জন বললেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে

জুয়েল চৌধুরী : একই রোগ, পরীক্ষাও একই। কিন্তু একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফলাফল একাধিক রকম। মিল নেই একটির সঙ্গে অন্যটির। এতে রোগ নির্ণয়তো দূরের কথা উল্টো নানা ওষুধ সেবনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এমন বিভ্রান্তিকর রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক রোগীর জীবন বিপন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের অভাবে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয়ের সঠিক রিপোর্ট পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসক না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ টেকনিশিয়ান ও নন মেডিক্যাল কর্মচারীরা পরীক্ষার কাজ করে থাকেন। আর অনেক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত মেডিকেল যন্ত্রপাতি পর্যন্ত নেই। সরকারী হাসপাতালে রিপোর্ট করিয়ে তা নিজেদের নামে চালিয়ে বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী অনুমোদন ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ব্যবসার ছড়াছড়ি এখন হবিগঞ্জ জেলা জুড়ে।
সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়েই চলে রোগ নির্ণয়ের সব পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে অহরহ ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগের পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে। পুরুষের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের বিবরণ। আবার উল্টো চিত্রও আছে। এসব রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। অভিযোগ তুলেও এসবের প্রতিকার মিলছে না।
জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে দুই একেকটিতে রিপোর্টের জন্য ডাক্তার থাকলেও অধিকাংশগুলোতে প্যাথলজিস্ট রিপোর্ট দিন। যার ফলে রিপোর্ট অধিকাংশ সময় উল্টা পাল্টা হয়।
ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহকৃত স্লিপে টিক মার্ক দিয়ে দেন কোন কোন টেস্ট করাতে হবে। রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার সে রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেন। ওই সেন্টার তাকে কমিশন দেয়। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসা মেলে। পরীক্ষার ফি বাবদ ইচ্ছামাফিক টাকা-পয়সা আদায় করা হচ্ছে। একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একেক প্রতিষ্ঠানে ধ্যার্য আছে একেক ধরনের ফি। নিয়ম আছে রেট চার্ট প্রতিষ্ঠানের দর্শনীয় স্থানে লাগিয়ে রাখার। কেউ সে নিয়ম মানছে না। বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করিয়েও সঠিক রোগ নির্ণয়ের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। রোগী আকর্ষণের জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় বিশেষজ্ঞদের তালিকার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হলেও তাদের অধিকাংশকেই পাওয়া যায় না। নাম ব্যবহার বাবদ মাসিক ফি দেয়া হয় ওইসব ডাক্তারকে। ডাক্তাররা এখন সামান্য জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশির জন্যও ডজন ডজন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছেন। প্রয়োজন না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করিয়ে ছাড়েন তারা। সুযোগ থাকলে অপারেশনের মুখোমুখি করিয়ে লাইফ সাপোর্টের পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয় রোগীকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডাক্তারের জন্য রয়েছে লোভনীয় কমিশন। সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে অভিজাত হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেই শতকরা ৫০ ভাগ ‘ভর্তি ফি’ সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পকেটে যায়। এ কমিশন বাণিজ্যের প্রভাবে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জের প্রাইভেট ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যান্ত নাজুক। তবে যারাই আমাদের কাছে অভিযোগ করেন সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর