মাধবপুর প্রতিনিধি : বাগান শ্রমিকদের লাগাতার ১৮ দিনের কর্মবিরতির কারণে চা বাগানের কুঁড়িপাতা অনেক লম্বা হয়ে যায়। পরে কর্মবিরতির থেকে ফিরে চা শ্রমিকরা সেই লম্বা চা পাতা কাচি দিয়ে কেটে সংগ্রহ করে। কিন্তু এখন নতুন করে আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে মাধবপুরের চা বাগানে। সবুজের পরিবর্তে চা গাছের পাতা সতেজতা হারিয়ে বির্বণ ধারণ করেছে। মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানসহ লস্করপুর ভ্যালির অধিকাংশ চা বাগানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চা বিশেষজ্ঞরা এটিকে রেড স্পাইডার বা লাল মাকড়সার রোগ বলে চিহ্নিত করেছেন। বিভিন্ন কীটনাশক দিয়ে এ রোগ সারাবার চেষ্টা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।
চা বাগান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একনাগারে আঠারো দিন বাগান বন্ধ থাকার কারণে চা সেকশনে জঙ্গল সৃষ্টি হয়ে মাকড়সা সৃষ্টি সহ বিভিন্ন কীট পতঙ্গের উপদ্রব বেড়ে গেছে।
নোয়াপাড়া চা বাগানের ডেপুটি ব্যবস্থাপক সোহাগ মোহাম্মদ বলেন, লাল মাকড়সা ক্লোরোফিল বা পাতার রস খেয়ে ফেলার কারণে চা বাগান কালো হয়ে যায়। জুলাই মাসে এ রোগের প্রার্দুভাব বেশি । লাল মাকড়সার পা রয়েছে ৮টি। প্রতি এগারো থেকে বারো দিন পরপর মাকড়সার ডিম থেকে লাখ লাখ বাচ্চা ফুটে। যা কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাগানে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। চা গাছের উপরিভাগের কমপক্ষে দুই ইঞ্চি ভেতরে ছিদ্র করে ফেলে। এ কারনে নতুন কুঁড়ি দিতে অনেক সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, এ বছর আগস্ট মাসে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে লাল মাকড়সার উপদ্রব বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৭০ ভাগ চা উৎপাদন কম হবে। গত বছর নোয়াপাড়া চা বাগানে ৬ লাখ ১২ হাজার কেজি উৎপাদন হয়েছিল।
জগদীশপুর চা বাগানে গত ৩ বছর ধরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এ বছর চা শ্রমিকের কর্মবিরতির কারণে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চা বাগানে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারণে গত ৩ বছর ধরে সরকারি মালিকানাধীন জগদীশপুর চা বাগান লোকসানের মধ্যে রয়েছে। এ বার ভরা মৌসুমে চা বাগান কালো হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন অনেক কমে গেছে।
সহকারী ব্যবস্থাপক মনির আহমেদ বলেন, চা বাগানের এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাগানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাগান পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়েছেন।
একই অবস্থা দেখা দিয়েছে বৈকন্ঠপুর চা বাগানে। বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বর্ধিত মজুরি ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় চায়ের উৎপাদন খরচ এখন তোলা যাচ্ছে না। এছাড়া চা বাগানে বিভিন্ন রোগের কারণে উৎপাদন কমতির দিকে। এদিকে পারকুল, চন্ডী, আমু, নালুয়া চা বাগানের চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে নতুন কুঁড়ির দেখা মিলছে না।