,

অন্যের ফোনে আড়ি পাতা জঘন্য পাপ

সময় ডেস্ক : যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ দিন দিন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণেও নিচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তা। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রাখে না। মানুষের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিপদে ফেলার ফাঁদ পাতে অপরাধীরা। এখন বেশির ভাগ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। কখনো কখনো এই স্মার্টফোনই মানুষের বিপদের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিভিন্ন অ্যাপ বা স্পাইওয়্যারের সাহায্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তির স্মার্টফোনে আড়ি পাততে সক্ষম সাইবার অপরাধীরা। এ জন্য বিভিন্ন সেবার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনে গোপনে স্পাইওয়্যার প্রবেশ করায় তারা। এতে ব্যবহারকারীরা জানতেই পারে না, তাদের অনলাইন বা অফলাইন কার্যক্রমে নজরদারি করা হচ্ছে। একসময় দেখা যায়, তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্যের হাতে চলে যাচ্ছে, ব্যাংকের টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে, ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি।
ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে তার ওপর নজরদারি চালানো নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারোর গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান কোরো না। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২)
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার রক্ষা করে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, তা হলো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার। অহেতুক মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত দোষত্রুটি খোঁজার জন্য তার পেছনে লেগে থাকা, প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ফোনে আড়ি পাতা জায়েজ হবে না। তবে কারো মাধ্যমে যদি রাষ্ট্রের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে বৃহত্তর স্বার্থে আইনসিদ্ধ পদ্ধতিতে তার ওপর নজরদারি চালানোর অধিকার যাদের আছে, তারাই শুধু যৌক্তিক ব্যবস্থা নেবে। ইসলামের দৃষ্টিতে কারো ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারের জন্য এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
মানুষের ক্ষতি করার লক্ষ্যে যেকোনো ধরনের চক্রান্তকারী ব্যক্তিকে হাদিসের ভাষায় অভিশপ্ত বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভিশপ্ত সে, যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে। ’ (তিরমিজি, হাদিস ১৯৪০)
স্মার্টফোনে আড়ি পাতাও অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করারই অংশ। যারা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হবে তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কথা গুপ্তভাবে শুনল, অথচ সে তাদের কথাগুলো শুনুক তারা তা পছন্দ করছে না অথবা তারা তার অবস্থান টের পেয়ে তার থেকে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে, কিয়ামতের দিন এ জন্য তার কানে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস ৭০৪২)
আরেকটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হে লোকেরা, তোমরা যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ, অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে ঢোকেনি, তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিয়ো না। তাদের দোষ অনুসন্ধান কোরো না। কারণ যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দোষ অনুসন্ধান করল, আল্লাহ তাআলা তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর যার দোষ আল্লাহ তাআলা অনুসন্ধান করবেন তাকে অবশ্যই তিনি লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন, যদিও সে নিজ ঘরের অভ্যন্তরেই অবস্থান করুক না কেন। (তিরমিজি, হাদিস ২০৩২)
নাউজুবিল্লাহ, এই হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায়, অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, তার গোপন তথ্য হাতানোর অপচেষ্টা করা মুমিনের কাজ নয়। এগুলো মানুষের অধিকার হরণের শামিল। এগুলোর দ্বারা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয়, শত্রুতার বীজ বপন হয়, যা ইসলাম সমর্থন করে না। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের অন্যের দোষত্রুটি খুঁজতে বারণ করেছেন, বরং প্রত্যেককে ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত, তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ কোরো না। কেননা খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের দোষত্রুটি খুঁজো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিয়ো না এবং একে অপরের প্রতি শত্রুতা পোষণ কোরো না; বরং ভাই-ভাই হয়ে যাও। (বুখারি, হাদিস ৫১৪৩)
তা ছাড়া স্মার্টফোনে আড়ি পাতা এবং তার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যের সম্ভ্রমহানির শামিল, যার শাস্তি ভয়াবহ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয় সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস ২৪৪৯)
মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের জঘন্য পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


     এই বিভাগের আরো খবর