,

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সংকোচ ভেঙে সচেতন হোন

সময় ডেস্ক : অক্টোবর মাস, স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। বিশ্বজুড়ে প্রতি আটজন নারীর একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই রোগটি ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তখন হয়তো আর কিছুই করার থাকে না। দ্বিধা, সংকোচ ও সংস্কারের বেড়াজাল পেরিয়ে অনেক নারী এখনো বিষয়টি নিয়ে অকপট না। আজও নারীরা একেবারে কাছের মানুষটির সঙ্গেও নিজের লক্ষণগুলোর কথা সহজে বলতে পারেন না। অথচ স্তন ক্যানসারে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে জীবন বাঁচানো যায়। তাই স্তন ক্যানসারে যেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও আবশ্যক। বিষয়গুলো নিয়ে লজ্জা-সংকোচ ভাঙার সময় এসেছে।
নিজের যত্ন নিন- কোনো লক্ষণ না থাকলেও ২০ বছর বয়সের পর থেকেই প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পারিবারিক পরিসরেই এ নিয়ম গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রতিবছর স্তনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও ভুলবেন না।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমান। মা হলে দুই বছর পর্যন্ত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান। প্লাস্টিকের সামগ্রীতে খাদ্য ও পানি সংরক্ষণের অভ্যাস পরিহার করুন। রাসায়নিকসমৃদ্ধ পরিষ্কারক, রূপচর্চার পণ্য ও কীটনাশক ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। থ্যালেট ও প্যারাবেনসমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করবেন না। মেনোপজের পর হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
খাদ্যাভ্যাস হোক স্বাস্থ্যকর। সবাই মিলে বাইরে খেতে গেলে কিংবা বন্ধুবান্ধবের আড্ডায়ও স্বাস্থ্যসচেতন খাদ্যতালিকা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর রোজকার খাবার তো ঠিকঠাক হওয়া চাই-ই।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর চিপস, প্যাকেটজাত ভুট্টা, প্যাকেটসহ মাইক্রোওয়েভে তৈরি খই বা পপকর্ন, গরু, ছাগল, ভেড়া, শূকর ও অন্যান্য পশুর মাংস; ক্যালরিবিহীন কৃত্রিম চিনি (জিরো ক্যালরি চিনি), লবণসমৃদ্ধ হটডগ, সালামি, মিটলোফ ও সসেজ-জাতীয় খাবার এবং টিনজাত টমেটো এড়িয়ে চলা ভালো।
রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন মটরশুঁটি, পেঁয়াজপাতা, মিষ্টি আলু, শাকসবজি, তাজা ফল, শস্যের মতো আঁশযুক্ত খাবার ও গ্রিন টি। সয়াবিন ও অন্য সয়া পণ্য, যেমন টফু খেতে পারেন। গরু বা ছাগলের দুধ ও দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার, যেমন পনির ও টক দই খেতে পারেন। বাদাম, মাশরুম ও সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। নারকেলের তেল, জলপাই তেল, তিসির তেল এবং রসুন ও হলুদ দিয়ে তৈরি করা খাবার খেতে পারেন।
চিকিৎসা নিতে দেরি নয়- নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করার সময় যদি কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা কিংবা পরিবর্তন চোখে পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করবেন না। কোনো গোটা অনুভব করলে, স্তনে কোনো দাগ দেখা দিলে, স্তন লাল হয়ে গেলে, উষ্ণ অনুভব করলে, স্তন বা এর চারপাশে ফুসকুড়ি হলে, স্তনে ব্যথা হলে, স্তনের চামড়া কুঁচকে গেলে, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে গেলে, স্তনবৃন্ত থেকে কোনো তরল নিঃসৃত হলে—মোটকথা, স্তন বা স্তনবৃন্তের যেকোনো পরিবর্তন গুরুত্বসহকারে নিন। আপনজনের সঙ্গে কথা বলুন। চিকিৎসা নিন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও ক্যানসার যদি হয়েও যায়, নিজেকে দুর্ভাগা মনে করবেন না। বাংলাদেশে ক্যানসারের সুচিকিৎসা রয়েছে। তবে সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করাটা জরুরি। ক্যানসারের চিকিৎসা বিশাল এক যাত্রা। এ যাত্রার শেষে ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে ফিরতে হলে যাত্রার শুরুটা হতে হবে ঠিকঠাক। তাই স্তনের যেকোনো সমস্যা হলে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করা চলবে না।
লেখক: ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), মহাখালী, ঢাকা।


     এই বিভাগের আরো খবর