,

নবীগঞ্জের চরগাঁওয়ে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা

দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

ফজরের আজানের পূর্বে ঘর থেকে বেরিয়ে যান হত্যাকারী জারু মিয়া এবং প্রচার
করেন ফজরের নামাজ পড়ে এসে বিছানায় স্ত্রীর গলাকাটা লাশ দেখতে পান তিনি

জাবেদ তালুকদার ॥ নবীগঞ্জের চরগাঁওয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করে ফজরের আজানের পূর্বে ঘর থেকে বেরিয়ে যান স্বামী। পরে ঘরে এসে সবাইকে জানান ফজরের নামাজ পড়ে এসে বিছানার উপর স্ত্রীর গলাকাটা লাশ দেখতে পান তিনি। এ ঘটনায় দ্রুততম সমেয়র মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী জারু মিয়াকে গ্রেফতার করে গতকাল শনিবার সকালে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন ঘাতক জারু মিয়া। মোঃ জারু মিয়া (৫৫) নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের মৃত মরম আলীর পুত্র।
জানা যায়, গত শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে জারু মিয়ার বসতঘর থেকে তার স্ত্রী তহুরা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় স্বামী জারু মিয়া জানান, ফজরের নামাজ পড়ে এসে বিছানার উপর স্ত্রীর গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পরে জারু মিয়া এবং তার ২ ছেলে মঞ্জিল মিয়া ও রমজান আলীসহ আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে জারু মিয়া একেকবার একেকধরণে কথা বার্তা বলতে থাকে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ ডালিম আহমেদ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নবীগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল কাইয়ুম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জারু মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি।
ঘটনার খবর পেয়ে গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এস.এ মুরাদ আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) শৈলেন চামকা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মাহমুদুল হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের, ডিবির ওসি শফিকুল ইসলামসহ ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২.০৫ ঘটিকায় (গতকাল শনিবার) নিহত তহুরা বেগমের পুত্র আল আমিন বাদী হয়ে জারু মিয়াকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে জারু মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়- নিহত তহুরা বেগমের পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রায় ৩০ বছর আগে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জারু মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তহুরা বেগম। তাদের দুই সন্তানও রয়েছে মঞ্জিল মিয়া (২৭) ও রমজান আলী (২০)। জারু মিয়া তহুরা বেগমকে বিবাহের আগে আরো ২টি বিবাহ করেছেন। জারু মিয়া একজন জুয়াড়ী হওয়ায় প্রায়ই জুয়ার টাকার জন্য তহুরা বেগমকে মারপিট করতেন। জারু মিয়ার এমন আচরণের কারণে তার ছেলে মঞ্জিল মিয়া ও রমজান আলী জারু মিয়াকে টাকা পয়সা না দেওয়ায় তহুরা বেগমের সাথে জারু মিয়ার পারিবারিক ভাবে মনোমালিন্য দেখা দেয়। পরে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রতিবেশী বাদশাহ মিয়া ও সালেহ মিয়াকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জারু মিয়া।
পরিকল্পনা মোতাবেক গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫ টার মধ্যে কোন এক সময় জারু মিয়া সকলের অগোচরে হাঁটু দিয়ে স্ত্রী তহুরার মুখ চেপে ধরে বাঁশ কাটার ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত তহুরা বেগমের গলা কেটে হত্যা করেন এবং ফজরের আযানের আধা ঘন্টা আগে ঘর থেকে বের হয়ে যান। ঘরে এসে “ফজরের নামাজ পড়ে এসে বিছানার উপর স্ত্রীর গলাকাটা লাশ দেখতে পান” বলে প্রচার করতে থাকেন। পরে পুলিশ জারু মিয়া এবং তার ২ ছেলে মঞ্জিল মিয়া ও রমজান আলীসহ আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামি জারু মিয়া একেকবার একেকধরণে কথা বার্তা বলতে থাকেন। পরে জারু মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ডালিম আহমেদ বলেন, “হত্যাকান্ডের পরপরই আমরা রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা শুরু করি। পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি স্যারের দিকনির্দেশরায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।”


     এই বিভাগের আরো খবর