,

মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট হলেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ কার্যক্রম

ফসলি জমি ও বৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে ইটভাটায়

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি জমি ধ্বংস ও পরিবেশ বিনষ্ঠ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। এদের অনেকের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসব ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি বনাঞ্চল ও বনাজী, ওষুধিসহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছ। পাশাপাশি ইটভাটায় থেকে মাটি ও ইট সরবরাহকালে বড় বড় ট্রাক, দানবরূপি ট্রাক্টর, লরীসহ বিভিন্ন পরিবহণ দিয়ে নিয়ে যাবার সময় রাস্তাঘাট ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে আবার ধুলাবালিতে অনেকেই রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছেন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। পাহাড় এবং ফসলি জমি কাটার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কর্ণপাত করছেন না কোনও ইট ভাটার মালিক।
জানা যায়, বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজার, পুটিজুরী, চলিতার আব্দা, নতুন বাজার, হাফিজপুরের সুজাত ব্রিকস ফিল্ড, লস্করপুর, নতুন ব্রিজ, পাইকপাড়া, রতনপুর, বনগাঁও, বৈদ্যের বাজার, পুকড়া, নবীগঞ্জের মিলনগঞ্জ, চুনারুঘাটের বিভিন্নস্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্রিকস ফিল্ড রয়েছে। এর অনেকটাতেই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। লাইসেন্স থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণসহ নানা ত্রুটি রয়েছে। তবুও প্রভাবশালী হওয়ায় গায়ের জোরেই এসব ব্রিকস ফিল্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে অর্থদণ্ড করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রভাব খাটিয়ে এসব ব্রিকস ফিল্ডের মালিকরা চালু করে কাজকর্ম চালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে অনেক শ্রমিকরা মালিকদের হাতে লাঞ্চিতও হয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনকে বারবার এই বিষয়ে অবগত করলে ও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিভিন্ন পাহাড়-ফসলি জমি কেটে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া বেশিরভাগ ইটের ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কম উচ্ছতার টিনের ছিমনি। ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
কয়লা দিয়ে এসব ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও খরচ সাশ্রয়ের জন্য সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্ভয়ে প্রকাশ্যেই এসব ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বন থেকে পাচার করে নিয়ে আসা মূল্যবান হচ্ছে শিশু গাছ। অনেকে গোপনে অবৈধভাবে কাঠ মজুদ করে চালিয়ে যাচ্ছে এ সমস্ত কার্যক্রম। এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই পার্শ্ববর্তী বনভূমি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফসলি জমি এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের মাটি এমনকি বন উজাড় করে শিশু গাছ পাচার করে নিয়ে লুকিয়ে এনে সরকারি নিয়মনীতি লড়ঘন করে ইট ভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স। ইট ভাটার কাছাকাছি বাচ্চাদের কয়েকটি স্কুল এবং হাই স্কুল এবং কলেজ রয়েছে। বিশেষ করে শিশু শিার্থীরা এই ইটের ভাটার ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বা¯’্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ইটের ভাটার কারণে পার্শ্ববর্তী অনেক জমিতেই এখন আর ফসল হয়না। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর