,

অর্থবছরের চার মাসের আমদানি ব্যয় :: কমেছে খাদ্যশস্যে, বেড়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও সারে

সময় ডেস্ক : আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ এবং বিশ্ববাজারে দর ওঠানামার প্রভাবে দেশের আমদানি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কমেছে। আগের চেয়ে কমেছে কোনো কোনো পণ্যের আমদানি ব্যয়। তবে সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় এখনও আগের চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানিতে ৩৬ শতাংশ ব্যয় বেড়েছিল। জাহাজীকরণের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের চার মাসে খাদ্যশস্যের আমদানি ব্যয় বেশ কমেছে। সরকার বেসরকারি আমদানিকারকদের সুযোগ দিলেও চাল আমদানি আগের একই সময়ের চেয়ে কম। এ সময়ে প্রায় ১৬ কোটি ডলারের চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যার পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় কমেছে ৫২ শতাংশ। গম আমদানির জন্য ব্যয় হয়েছে ৪১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৬১ কোটি ডলারের চেয়ে ৩২ শতাংশ কম। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পরিসংখ্যানে দুই সময়কালে কত টন চাল ও গম আমদানি হয়েছে তা নেই। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চাল ও গমের দাম এখনও বাড়তি। বিশ্বব্যাংকের পণ্যদর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে থাইল্যান্ডের (৫ শতাংশ ভাঙা) চালের প্রতি টনের গড় দর ছিল ৪৪৩ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ৪২০ ডলার ছিল।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিকভাবে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এ সময়ে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ১২৬ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৮ কোটি ডলার। তবে চিনির আমদানি ব্যয় ৩১ কোটি ডলার থেকে কমে ১৪ কোটি ডলারে নেমেছে। ডালের আমদানি ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ডলার, যা আগের মতোই।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের পণ্যের আমদানি ব্যয় পর্যালোচনা করে কোনো পণ্যের আমদানির পরিমাণ সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাবে না। কেননা কোনো কোনো এলসির পরিশোধ সঙ্গে সঙ্গে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য আসার এক বছর পরও দাম পরিশোধ করা হয়। আবার আগের তুলনীয় সময়ের চেয়ে পণ্যের দাম কম বা বেশি হতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যশস্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে। এর নানা কারণ রয়েছে। ব্যাংকে ডলারের অনিশ্চয়তা রয়েছে। এলসি খুলতেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববাজারে দামের ওঠানামাও একটি কারণ হতে পারে।
সরকার অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে। বেশ কিছু পণ্যে বাড়তি কর আরোপ করা হয়েছে। তবে কৃষির প্রয়োজনে সার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর আমদানিতে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়নি। জুলাই- অক্টোবর সময়কালে ২২৪ কোটি ডলারের সার আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১৪ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে সার আমদানির জন্য ব্যয় হয় ১০৫ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অবশ্য গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
এদিকে মধ্যবর্তী পণ্য বিশেষত শিল্পের কাঁচামালে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। চার মাসে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৭১৮ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলার। মধ্যবর্তী পণ্যের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় কমেছে ১৫ শতাংশ। আগের একই সময়ের ৩৫ কোটি ডলার থেকে ২৯ কোটি ডলারে নেমেছে। তবে তৈরি পোশাকসহ কিছু শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। তুলা আমদানি হয়েছে ১৮০ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের চার মাসের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। সুতার আমদানি ব্যয় কমেছে। বেড়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের কাপড় আমদানি। অন্যদিকে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।

 


     এই বিভাগের আরো খবর