,

নবীগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিধু বাবু’র স্মরণে স্মারক হস্তান্তর

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশ গুপ্ত বিধু বাবু এক কৃতিমান বীর পুরুষের নাম। এই অকুতোভয় দুঃসাহসী মানুষের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গোজাখাইর গ্রামে। ২৫ মার্চের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের সৈনিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের দায়িত্ব পালনে ব্রত হন। তার নেতৃত্ব। তার সাহসীকতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নজরদারিতে থাকায় বিধু বাবুকে জীবিত বা মৃত্যু আটকের নির্দেশ আসে। কিন্ত জমিদার বাড়ির বিধু দমবার পাত্র নয়। তিনি শুধু সংগঠকের দায়িত্বই পালন করেন নি। নিরপত্তা দিতে গ্রামবাসীর পাশে দাড়িয়েছেন, দুহাত ভরে যুদ্ধ বিধস্ত নিঃস্ব মানুষের সাহায্যে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হলো। বাংলার মাটিতে মিশে গেলো জমিদার বিধু বাবু বসত ভিটা। জমিদার বিধু বাবু মাথা গোজাখাইর গ্রামে মাথা গোজার তিলপরিমান জায়গা রইল না। একজন বিধু বাবু যার অনেক ত্যাগ। অনেক দেয়ার ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু তার নামটুকু আসেনি মহান মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। তিনি ব্যক্তিত্ববান মানুষ ছিলেন। তিনি দাতা ছিলেন। দিয়েছেন অনেক। নেননি কিছুই। তার বিরত্ব আমাদের কাছে তাকে মহত্তম জীবন অনুসরণী করে রেখেছে। আর এই বীরকে নতুন প্রজন্নের কাছে তুলে ধরতে। তার গ্রামের সবুজশ্যামল মাটে বেড়ে উঠা তরুনদেরকে বিধু বাবুকে ত্যাগের কথা তুলে ধরতে আমরা ২০১৮ হতে কাজ করে আসছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিধু বাবু স্বজনরা গতকাল শনিবার ১৪ জানুয়ারী হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসেছেন তাদের কাকার স্মৃতির স্মরণে তার যুদ্ধকালীন ব্যবহারিত শাল, প্রিয় টুপি, কোট ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ পারিবারিক স্ব-স্ত্রীসহ বেশকিছু ছবি স্মারক হস্তান্তর করতে আসে বিধুবাবু ভাতিজি তাপসী হক ভারতী দাশ গুপ্ত, ডাঃ সামন্ত লাল সেন, শিবানী দেহ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরা।
জাতীয় সংগীতের মূর্চনায় শুরু হওয়া স্মারক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শহীদের স্মরনে নিরবতা পালন ও বিধুবাবুকে নিয়ে জীবন ঘনিষ্ট আলোচনা করেন উপস্থিত বক্তরা। জাদুঘরের সদস্য সচিব ও প্রতিষ্টাতা আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, আমরা হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হতে দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের নির্জাসকে তুলে আনতে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বদ্ধপরিকর। আমাদের সীমাবদ্ধতা। আমাদের অনটন আছে। কিন্তু আমাদের ক্লান্তি নেই। আমাদের ভয় নেই। আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট।
বিধুবাবুর ভাতুষপুত্র শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও সাজারী ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ হতে বিধুবাবুকে নিয়ে প্রথমবারের মত এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
বিধু বাবুর ভাতিজি তাপসি হক বলেন বিধু কাকার নামটি তো মুছেই গিয়েছিল। কেয়া চৌধুরী ২০১৮ সালে কাকার নামে স্মৃতি স্তম্ভ ও একটি বিদ্যালয় ভবন স্থাপনে কাজ করেন। আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।
ভারতী দাশ গুপ্ত বলেন বিধু বাবুর নাম মুক্তিযু্দ্েধর ইতিহাসে আছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই। সাবেক অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই ত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা যোদ্ধা তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে।
সাবেক অধ্যক্ষ জাহানারা বেগমের সঞ্চলনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপেশ চন্দ্র দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ধরনী সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজিয়া খাতুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুস জাহের, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ, সাবেক সভাপতি, সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান, প্রথম আলো জেলা প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান নিয়ন, চেনেল আই জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, সাংবাদিক সুরুজ আলী, নূর উদ্দিন আহমেদ, হাসিব চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় মিনু, কমরেড মাসুদ আহমেদ, সৈয়দ জাহির আলী, হাসিব চৌধুরী সহ প্রমূখ। কোর আনতেলাওয়াত করেন সৈয়দ জাহির আলী ও গীতাপাঠ করেন মৃনাল কান্তি রায় মিনু।
উল্লেখ- বাংলাদেশের প্রথম আঞ্চলিক জাদুঘর হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক আয়োজিত সভা অনুষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ পুরাতন হাসপাতাল সড়ক হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবনে।


     এই বিভাগের আরো খবর