,

নবীগঞ্জে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবাসীর দাবি একটি লাঠিয়াল চক্র কর্তৃক প্রবাসী পরিবারকে নানাভাবে হুমকির অভিযোগ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসিন্দা ও শাহজালাল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টের মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয়েছে পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের মৃত আরমান উল্লা’র পুত্র আব্দুস সাহিদ ওরপে সাহিদ মিয়া তাদের পরিবারকে নিজে ও লাঠিয়াল বাহিনীর মাধ্যমে নানা ভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। প্রবাসী পরিবারটি সাহিদ মিয়ার অবৈধ কর্মকান্ড ও প্রাননাশের হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। মরহুম হাজী শেখ মনর মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার ৩ পুত্র সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিষদ বর্ণনা দেন। আমেরিকা প্রবাসী শেখ সাইদুর মিয়া লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, পিতার খরিদা সূত্রে পাওয়া ভূমির উপর তার ৫ ভাই’র মধ্যে ৪ ভাই যুক্তরাজ্য ও আমেরিকায় বসবাস করেন। তাদের পিতা মরহুম শেখ মনর মিয়া ১৯৬৮ ইংরেজীতে রেজিস্ট্রারী দলিলে খরিদাসূত্রে মালিক হয়ে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে ১ খন্ড ভূমিতে প্রায় ২৫ বছর পূর্বে পাকা পিলার দিয়ে গৃহ নির্মাণ করে তথায় শাহজালাল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা চালু করেন। পিতার মৃত্যুর পর অপরাপর সম্পত্তির মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের অবর্তমানে ছোট ভাই শেখ জসিম মিয়া দেশের ওই হোটেল ব্যবসা দেখাশোনা করেন। শেখ সাইদুর অভিযোগ করেন, তার বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ স্বরাজ মিয়া গত আগষ্ট মাসের শেষ দিকে দেশে আসেন। এবং দোকানগৃহের চালার কাঠ ও টিন কিছু পুরাতন হওয়ায় গৃহের সংস্কার কাজে হাত দেন। কাজ প্রায় সমাপ্তির পর্যায়ে আসার পর পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের বাসিন্দা মৃত আরমান উল্লার পুত্র আব্দুস সাহিদ ওরপে সাহিদ মিয়া একটি লাঠিয়াল বাহিনী সাথে নিয়ে তাদের দোকানগৃহের সামনে গিয়ে তার ভাইকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে ঘরের কাজ বন্ধ করতে বলেন। শেখ সাইদুর মিয়া বলেন,২৫ বছর যাবৎ নির্বিঘেœ ব্যবসা করার পর হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করার জন্য আপত্তি এই প্রথম। সাইদুর ঘটনার খবর পেয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে দেশে আসেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মীমাংসা করার জন্য উদ্যোগ নেন। প্রথম সালিশ যথাক্রমে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, পৌর প্যানের মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী ও পৌর কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ প্রায় দীর্ঘ ১ মাস উভয় পক্ষের দলিল ও কাগজাদী পর্যালোচনা করেন। এক পর্যায়ে বিজ্ঞ সালিশগণ সাহিদ মিয়ার সাথে আলোচনা করে সরেজমিনে যান। সালিশগণ সরেজমিনে গিয়ে তাদের ঘরের চালে টিন লাগানো এবং পিছনের কিছু ভূমি জরিপের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু সাহিদ মিয়া প্রথমে ওই সিদ্ধান্ত মানলেও পরক্ষণেই তা মানেননি। কিন্তু সালিশবৃন্দের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় সাহিদ মিয়ার দৃষ্টিতাকে তৎকালীন সালিশবৃন্দ আমলে নেননি। এ পর্যায়ে সালিশবৃন্দ ব্যর্ত হয়ে বলতে গেলে অসহায় হয়ে পরেন। এ পর্যায়ে শেখ সাইদুর রহমান নিরুপায় হয়ে পৌর মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরীকে বিষয়টি অবহিত করেন। পৌর মেয়র উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরীকে সাথে নিয়ে আরেকটি সালিশের ব্যবস্থা করেন। পরে এ বিষয় নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পুনরায় সালিশ বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে দুই পক্ষের জবানবন্দি শোনেই ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্ত অসংখ্য মুরব্বিদের আলোচনার কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। ১১দিন হাতে নিয়ে বোর্ড গত ২ নভেম্বর সিদ্ধান্ত দেওয়ার ঘোষনা দেন। এ সময় সালিশ বোর্ড থেকে বলা হয় নির্ধারীত তারিখে বোর্ডের একজন সদস্য উপস্থিত থাকলেও বোর্ডের সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। কিন্তু সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাহিদ মিয়া এরই মধ্যে সিলেট সেটেলমেন্ট অফিসে রিভিউ মামলা করেন শেখ সাইদুর মিয়াদের পরিবারের উপর। কিন্তু রায় শেখ সাইদুরদের অনুকুলেই বহাল রয়েছে। শেখ সাইদুর মিয়া আরো দাবি করেন, সাহিদ মিয়া চলমান সেটেলমেন্ট জরিপের সময় হাট নবীগঞ্জ মৌজার ২১৭ নং দাগে ৩২ শতকের মধ্যে তার পিতার নামে ৫ শতাংশ ভূমি রেকর্ড হলে সাহিদ মিয়া আপত্তি, ৩০ ও ৩১ ধারায় মামলা করেও হেরে যান। শেখ সাইদুর মিয়া আক্ষেপের সাথে বলেন, দেশে অবস্থানের সময় খবর আসে আমেরিকায় অবস্থানরত তার শিশু সসন্তানরা তার অনুপস্থিতিতে শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। তখন তিনি তড়িগড়ি করে আমেরিকায় যান এবং ৪ দিনের মধ্যেই নির্ধারীত তারিখে সালিশের সিদ্ধান্ত জানার আগ্রহ নিয়ে আসেন। শেখ সাইদুর মিয়া অভিযোগ করেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি দুইবার আমেরিকা থেকে দেশে আসা-যাওয়া করাসহ আমেরিকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন তার অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে তার বড় ভাইও যুক্তরাজ্য থেকে ওই কাজ সম্পাদন করার জন্য দেশে আসায় তারও যুক্তরাজ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিসহ তাদের পিতার প্রতিষ্ঠিত চালু ও জমজমাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। শেখ সাইদুর বলেন, আমরা নিরীহ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবার। সাহিদ মিয়ার অবৈধ ও অন্যায় আচরনে তারা অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি বলেন, পিতার নির্মিত গৃহ অর্থাৎ শাহজালাল হোটেল এন্ড রেষ্টুুরেন্টের ভূমিতে যদি সাহিদ মিয়ার কোন মালিকানা স্বত্ব থাকতো তাহলে তিনি বিজ্ঞ আদালতের আশ্রয় নিতে পারতেন। সাহিদ মিয়া তা না করে অন্যায়ভাবে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত ও চালু রেষ্টুরেন্ট গৃহের কাজে বাধা দিয়ে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন। তা ছাড়া প্রথম সালিশের দেওয়া সিদ্ধান্ত সাহিদ মিয়া অমান্য করে বিষয়টি বিলম্বিত করেছেন। এতে তাদের পরিবারের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শেখ সাইদুর মিয়া আরো অভিযোগ করেন, ধার্য তারিখ ২ নভেম্বরের পূর্ব রাত্রে সালিশ বোর্ড পুনরায় তারিখ পরিবর্তন করে ৭ নভেম্বর তারিখ পিছিয়ে দিয়ে তাদের পরিবারকে অবহিত করেন। তারা প্রবাসী দুই ভাই সালিশ বোর্ডের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বোর্ডের সদস্যগণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা করে প্রবাসী হওয়ায় বিদেশে তাদের ব্যবসার ক্ষতি ও শাহজালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টটির ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সালিশ বোর্ডের বর্ধিত সময়সীমা তাদের সমূহ ক্ষতির কারনসহ তারা প্রবাসে চলে যাওয়ার সময় হয়েছে বলে বিষয়টি বিনীতভাবে সালিশবৃন্দকে জানান এবং তারা গৃহের অবশিষ্ট সংস্কারকাজ নিজ দায়িত্বে করবেন বলে জানিয়ে আসেন। পরে পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈধ সম্পত্তি রক্ষার জন্য ন্যায় সঙ্গতভাবে হোটেলগৃহের অবশিষ্ট কাজ তারা সম্পন্ন করেন। শেখ সাইদুর দৃঢ়ভাবে বলেন, সম্মানীত সালিশবৃন্দের প্রতি আমাদের আস্থা, বিশ্বাস ছিল এবং আছে। তিনি কাজ সম্পন্ন করার পর সাহিদ মিয়া বিভিন্নভাবে তাদেরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। বিষয়টি এলাকার মুরব্বিয়ান ও প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান শেখ সাইদুর মিয়া।


     এই বিভাগের আরো খবর