,

ফলোআপ : দোষ কার ছেলে না মেয়েটির স্কুলছাত্রী অর্ণাকে মারধরের অন্যরকম কারণ জানাল রাহুল!

মাহফুজ নয়ন ॥ আমাদের সমাজে অনেক সময়ই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। কোন কোন সময় এসব ঘটনার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, বিভিন্ন কারণেই ঘটছে এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আবার এ ধরনের কিছু ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করা হচ্ছে। তেমনি একটি ঘটনা গত ককেয়দিন আগে হবিগঞ্জ শহরে প্রকাশ্যে স্কুলছাত্রীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকের সাহায্যে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর শুরু হয় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা এবং নিন্দার ঝড়ের পাশাপাশি সেই বখাটে ছেলেটিকে গ্রেফতারের দাবি। আর এরই প্রেক্ষিতে সেই বখাটে নুরুল আমিনকে শুক্রবার দুপুরের দিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বিচারে স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করা নুরুল আমিন রাহুলকে (১৫) গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠাতে হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোহম্মদ আতাব উল্লাহ এ নির্দেশ দেন। এর আগে বিকেলে হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই এ.কে.এম রাসেলের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ আতাব উল্লাহর আদালতে রাহুলকে হাজির করা হয়। তবে রাহুলকে আদালতে হাজিরের পর বেরিয়ে এসেছে নানা ঘটনা জানা যায়, হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র নুরুল আমিন রাহুল। তার লেখাপড়া শুরু ঢাকার মধ্য বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে। বাবা ফজল মিয়ার মুদি মালের ব্যবসায় রয়েছে সেখানে। সেই সুবাধে রাহুল সেখানে থাকত। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পর তাকে বাবা পাঠিয়ে দেন হবিগঞ্জে। এরপর হবিগঞ্জের উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয় রাহুলকে। শহরের রাজনগরে মামা মোবারক হোসেনের বাসায় শুরু হয় তার বসবাস। পাশের বাসার শাহজাহান মিয়ার মেয়ে অর্ণা তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই অর্ণার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া রাহুলের। শিশু বয়সেই প্রেম প্রেম খেলা চলে রাহুল ও অর্ণার। রাহুল ভর্তি হয় হবিগঞ্জ উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে, এক বছর পর ষষ্ঠ শ্রেণীতে অর্ণা ভর্তি হয় হবিগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। এক পর্যায়ে বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়। এরপর রাহুলকে আবারো ঢাকায় নিয়ে যান তার বাবা। কিন্তু রাহুল সেখানে থাকতে নারাজ। পরিবারের কাছে কসম খেয়ে জানায় সে আর অর্ণার সাথে যোগাযোগ করবে না। তবুও সে হবিগঞ্জেই পড়তে চায়। বাধ্য হয়ে রাহুলকে হবিগঞ্জে পাঠান তার বাবা। আবারো সে ভর্তি হয় একই স্কুলের নবম শ্রেণীতে বাণিজ্য বিভাগে। রাহুল জানায়, দ্বিতীবার হবিগঞ্জে আসার পর অর্ণার সাথে সে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে অর্ণাই তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করত। এক পর্যায়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেয় রাহুল। একাধারে ২০ দিন সে স্কুলেই যায়নি। শ্রেণী শিক্ষক বদরুল আলম খন্দকার খবর দিয়ে রাহুলকে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করতে বলেন। স্যারের নির্দেশে সে আবারো স্কুলে যাওয়া শুরু করে। রাহুল আরো জানায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে অর্ণা একটি কালো ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় সাথে নিয়ে তার কাছে এসে বিয়ে করতে চাপ দেয়। বয়স না হওয়ায় বিষয়টি এখনই সম্ভব নয় জানালে তীব্র অভিমান করে অর্ণা। এরপরই শুরু হয় নতুন কাহিনী। রাহুলের কাছ থেকে ফিরে গিয়ে অর্ণা হৃদয় নামে এক কিশোরের সাথে প্রেম শুরু করে। হৃদয়ের বাড়ি শহরের উমেদনগরে। রাহুলের দাবি অর্ণাই হৃদয়কে তার প্রতি ক্ষেপিয়ে তোলে। একদিন হৃদয় তার বন্ধুদের নিয়ে রাহুলকে স্কুলে যাওয়ার পথে মারধর করে। মারধর করে অর্ণার স্কুলের সামনেই। অর্ণাও ঘটনাস্থলে পাশেই ছিল। অর্ণা তার বান্ধবীদের নিয়ে রাহুলকে নির্যাতনের কাহিনী প্রত্য করে এবং হাসিঠাট্টা ও করে। এরপর এতে চরমভাবে অপমান বোধ করে রাহুল। এর প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে রাহুল। ২৬ আগস্ট বিকেলে এবার বান্ধবীদের সামনেই অর্ণাকে চড়থাপ্পড় মারতে থাকে রাহুল। মোবাইলে ভিডিও করে তার বন্ধু নোমান ও শাকিল। নোমান ও শাকিল ফেসবুকে আপলোড করে ১ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি জেনে সাথে সাথে তা ডিলিট করে দেয় রাহুল। কিন্তু ইতোমধ্যে নোমান ও শাকিলের ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ কেউ দৃশ্যটি শেয়ার করে। ফেসবুক হোল্ডার শিশু হওয়ায় তাদের ফ্রেন্ড সংখ্যাও ছিল কম। ফলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা। ৩ সেপ্টেম্বর সেই দৃশ্যটি চলে আসে সাংবাদিকদের কাছে। ১ ঘণ্টার ব্যবধানে দৃশ্যটিতে শেয়ার করে ৫ হাজারেরও বেশি ফেসবুক হোল্ডার, যার ভিউয়ার ছিল তখন ৪৮ হাজার। এরপর সেটি চলে যায় টিভি মিডিয়ায় ও ইউটিউবে। চার ভাইয়ের মধ্যে রাহুল তৃতীয়। বড় ভাই তারেক থাই এলুমিনিয়ামের দোকানে কাজ করেন, দ্বিতীয় ভাই কাউছার বেকার, তৃতীয় রাহুল, ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। রাহুলের স্কুলের নবম শ্রেণীর ক্লাসটিচার বদরুল আলম খন্দকার জানান, রাহুল অত্যন্ত ভদ্র ছেলেদের একজন ছিল।


     এই বিভাগের আরো খবর