,

শিক্ষাঙ্গনে হঠাৎ অস্থিরতা

সময় ডেস্ক ॥ চলমান ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবিতে দফায় দফায় কর্মবিরতিতে রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অন্যদিকে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বুধবার রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা ও গুলির ঘটনায় এবং গতকাল বিকালে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তে অর্থমন্ত্রীর অটল অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছেন আন্দোলনকারীরা। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল একযোগে আন্দোলনে নামেন অন্যসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, পে-স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব- অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। পে-স্কেল আন্দোলনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ইস্যুটি। পরে আন্দোলনের মুখে গতকাল বিকালে অর্থমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু ভ্যাট বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রত্যাহার করার কোনো কারণ আমি দেখি না। এদিকে অষ্টম বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে নতুন করে আন্দোলনে নামেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষকরাও। সব মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন। অচল হয়ে পড়েছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। রাজধানীর ছয় স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ : টিউশন ফির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর ছয়টি স্থান ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে নামেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর রামপুরার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। নো ভ্যাট অন টিউশন ফিস ব্যানারে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ। পরে সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা রামপুরা সড়কে নেমে আসেন এবং সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। এ সময় মেরুল বাড্ডা থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার রাস্তা পর্যন্ত বিশাল সড়কজুড়ে অবস্থান নিয়ে ভ্যাটবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে ভ্যাট দেব না, গুলি কর, শিক্ষামন্ত্রী চুপ কেন’, নো ভ্যাট অন টিউশন ফিস- এমন অগণিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। আন্দোলন চলাকালে দুই দিকে পুলিশের ব্যারিকেড দেখা গেলেও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তারা কোনো বাধা দেয়নি। তবে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করায় রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। রামপুরাসহ আন্দোলন পয়েন্টগুলোয় যানবাহন বন্ধ থাকায় এ সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বহু লোককে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। গতকাল একই দাবিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন স্ট্যামফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস এবং ইআইইউর শিক্ষার্থীরা। মহাখালীতে বিক্ষোভ করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন। রাজধানী ছাড়াও সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়, শিকদার মেডিকেল কলেজ ও এনাম মেডিকেল কলেজ এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সারা দেশে মোট ১৬৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি প্রতিষ্ঠান একযোগে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সিলেট-চট্টগ্রামেও আন্দোলন : এদিকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটের সুরমা পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন স্থানীয় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে ভিআইপি সড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন স্থানীয় বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র সমালোচনা করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি তুলে নেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংগঠন নো ভ্যাট অন এডুকেশন-এর মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।


     এই বিভাগের আরো খবর