,

মৌলভীবাজার-৩ উপনির্বাচন নিয়ে নানান জল্পনা,কল্পনা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্থলাভিসিক্ত কে হচ্ছেন?

সময় ডেস্ক ॥ সদ্য প্রয়াত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্থলাভিসিক্ত কে হচ্ছেন? তার আসন থেকে কে নির্বাচিত হচ্ছেন? দলের প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে দলীয় নেত্রী কাকে মনোনীত করবেন মহসিন আলীর উত্তরসূরি- এ সব নিয়ে নানান হিসাব ঘুরপাক খাচ্ছে মৌলভীবাজারে। নির্বাচন কমিশন কিংবা দলীয় নির্দশনা না এলেও বসে নেই নেতা-কর্মীরা। নিজের পছন্দের নেতার প্রতি জনসমর্থন আদায়ে চালাচ্ছেন প্রচার। মৌলভীবাজার-৩ আসনটি মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পর শূন্য আসনে কে প্রার্থী হবেন- এমন জল্পনা-কল্পনা শুরু হলে খোদ মন্ত্রীর পরিবার ও কর্মী সমর্থকদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রীর সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসিনকে প্রার্থী হিসেবে দাবি করলেও মনোনয়ন দৌড়ে কে জিতবেন এমন আলোচনা মৌলভীবাজারের সব মহলে। মর্যাদাপূর্ণ মৌলভীবাজার-৩ আসনে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাক্তন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হন সৈয়দ মহসিন আলী। পরে তিনি জেলায় প্রথম পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পান। অসুস্থ থাকায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে দেশে-বিদেশে চিকিৎসায় তাকে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে জনপ্রিয় নেতা সৈয়দ মহসিন আলী গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শূন্য আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে চলছে জোর আলোচনা। উপনির্বাচন কেন্দ্রিক মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্ভব্য প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। সৈয়দ মহসিন আলীর স্বপ্ন পূরণ ও জনকল্যাণে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে তার ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় নতুন প্রার্থীদের তালিকা বাড়ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মী মোতাহার হোসেন মজনু। মৌলভীবাজার-৩ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন ডজনেরও বেশি দলীয়, স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রার্থী। মৌলভীবাজার-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের আলোচনায় আছেন সৈয়দ মহসিন আলীর সহধর্মিনী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা সায়রা মহসিন, বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ফিরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পুলিশের প্রাক্তন এআইজি সৈয়দ বজলুল করীম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কামাল হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা এম এ রহমি শহীদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খুরশেদ মাস্টার প্রমুখ। সফল রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, জনমানুষের নেতা বলে পরিচিত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ সাংগঠনিক আদর্শ লালন করে দলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় জোর কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পর শূন্য আসনে কে প্রার্থী হবেন এমন জল্পনা-কল্পনা শুরু হলে তিনিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে দলীয় আদর্শ অক্ষুন্ন রেখে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান। তবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান অথবা প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মৌলভীবাজারের কৃতী সন্তান গিয়াস উদ্দিন মনির বা জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুর রহমানকে পূর্ণ মন্ত্রী করতে প্রার্থী হিসেবে দল মনোনীত করতে পারে- এমন আলোচনাও চলছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এর আগে এ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিনকে মনোনীত করলে তৃণমূলের কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ফিরোজ। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ায় প্রার্থী তালিকা বাড়তে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. কামাল হোসেন বলেন, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনি দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে একটি শক্তিশালী দল। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন বলে অনেকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন। গত ১৯৯৮ সালের জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও সম্মেলনের পর থেকে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে। একদিকে প্রাক্তন চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ গ্র“প, অন্যদিকে (প্রয়াত) সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সমর্থিত গ্র“প এখনো পৃথক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। উপনির্বাচনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত থাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থের কার্যক্রমে সিলেট বিভাগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। ফলে চমক দেখাতে পারেন তিনি। প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর উত্তরসূরী হিসেবে সৈয়দা সায়রা মহসিনের সমর্থনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের (একাংশের) যৌথ উদ্যোগে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা হয়। শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের মন্ত্রীর বাস ভবনে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ আহমদের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক আনকার আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ফিরোজ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আলাউর রহমান চৌধুরী, মুহিবুর রহমান তরফদার, মন্ত্রীর ছোট ভাই সৈয়দ নওশের আলী খোকন, আতাউর রহমান লুকমান, মন্ত্রীর মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিন ও সৈয়দা সাবরিনা শারমিন প্রমুখ।


     এই বিভাগের আরো খবর