,

হবিগঞ্জে মেডিকেল কলেজ চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে মেডিকেল কলেজ চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনুমোদনের পরও শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। এটি চালুর জন্য এখনও পর্যন্ত অধ্যক্ষ বা শিক্ষক-কর্মচারী কোন কিছুই নিয়োগ দেয়া হয়নি। চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তালিকায়ও নেই এ মেডিকেল কলেজের নাম। অথচ দফায় দফায় মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা মেডিকেল কলেজ চালুর জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। একই সময় স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৩টি সম্ভাব্য স্থানও নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এদিকে মেডিকেল কলেজ চালুর অনিশ্চয়তার খবরে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল হুদা চৌধুরী শিবলী। তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি বড় পাওনা ছিল। বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ জেলার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকতর কম জনবসতি এলাকায়ও মেডিকেল কলেজ চালু হয়েছে। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পিযুষ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বাস। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় প্রত্যেক মানুষই আশান্বিত হয়েছিল এবার এখানেই উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যাবে। আর আমাদের ঢাকা বা সিলেটে যেতে হবে না। এখন মেডিকেলটি এ বছর চালু না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন নাট্যকর্মী তোফাজ্জল সোহেল ও নারী নেত্রী তাহমিনা বেগম গিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এটি চালুর জন্য প্রথমেই ডেভেলপমেন্ট পাইলট প্রজেক্ট (ডিপিপি) হতে হবে। অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষসহ লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। এর কোনো প্রক্রিয়া এখনও হয়নি। এখনও স্থান চূড়ান্ত হয়নি। এ জন্যই মূলত ডিপিপি গঠন হচ্ছে না। এটিই মূল বাঁধা। তা চূড়ান্ত হলেই ডিপিপি গঠন হতো। আর তা হলেই কাজ এগিয়ে যেতো। তিনি আরো বলেন, আমরাতো ৩টি স্থানের প্রস্তাবনা দিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে তারা কোনো স্থানটি চূড়ান্ত করেছে। এটি না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বরাদ্দও আসবে না। আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং হোস্টেলের জন্য পুরাতন হাসপাতাল ভবনটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এটিও আটকে গেছে। এটি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাইনি। সবাই বলে মন্ত্রণালয়ের বিষয় এটি। এখন এক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপ-সচিব (ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ আবদুর রউফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের স্থান দেখতে মন্ত্রণালয় থেকে টিম এসেছিল। আমরা ৩টি স্থান দেখিয়েছি। কিন্তু এখনও কেন হচ্ছেনা তা বলতে পারছি না। এটি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায়ও আলোচনা হয়েছে। আমরা নিয়মিতই যোগাযোগ রাখছি। চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান বলেন, এটি অনেক প্রক্রিয়ার ব্যাপার। শিক্ষক নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়া করতে হবে। তবে আশা করি হয়ে যাবে। এ বছর হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতেও পারে। তবে সেটি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এটি মন্ত্রী বলতে পারবেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ সফরে আসেন। শহরের নিউফিল্ডে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনগণের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির মেডিকেল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাাপনের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীও দাবি দুটি পূরণের ঘোষণা দেন। পরে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আকতার স্বাক্ষরিত পত্রে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেন। এরপরই অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং হোস্টেল হিসেবে পুরাতন হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়। আর স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৯০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসন ৩টি স্থান পছন্দ করে স্ক্র্যাচম্যাপ তৈরি করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে সে কাজও থেমে আছে। এদিকে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর একটি পত্র দেয় এ বছরের ২৫ মে। এতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও জনবলের তথ্য দেয়া হয়। এতে জনবল হিসেবে দেখানো হয় অধ্যক্ষ ও শিক্ষকসহ প্রয়োজন ২৮৩ জন। পরিচালকসহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ৯২৫ জন। আর প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় একশ’ কোটি টাকা। অথচ এখনও কোনো টাকাই বরাদ্দ তো নয়ই, একজন লোকও নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ১৭ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের নাম নেই। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এ মেডিকেল কলেজ চালুতে অনিশ্চয়তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর