,

নতুন সংকটে বিএনপি

সময় ডেস্ক ॥ বিএনপি নতুন সংকটে পড়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে দল গুছিয়ে নতুন করে আবারও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিল শীত মৌসুমে। সেই জন্য টার্গেট ছিল আগামী ৫ জানুয়ারি। ওই দিন থেকে তারা নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন সেই আভাসই দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতা। মাঠের নেতা ও কর্মীরা সেই আভাস পেয়ে নতুন করে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছিলেন। সেই ভাবে মাঠে বিএনপিকে গুছিয়ে আনার সব ধরনের উদ্যোগও নেওয়ার জন্য বলা হয়। কোন কোন জেলা বিএনপির নেতা এই সংক্রান্ত কাজ অনেক দূর এগিয়ে এনেছেন। কিন্তু বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫০টির বেশি জেলা ও সেসব জেলার উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। সময় পার হওয়ায় নতুন করে সময় দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে সিনিয়র ভাইস চেয়রম্যানের সঙ্গে দল গুছিয়ে আনা ও দলকে সুসংগঠিত করে নতুন করে আন্দোলনে যাওয়ার রূপ রেখা ঠিক করেছিলেন। তিনি দেশে এসে সেইভাবে কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তারেক রহমান এই আন্দোলনে কিভাবে লন্ডন থেকে কাজ করবেন সেটাও ঠিক করেন। এরমধ্যে সরকার স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন দলীয় ব্যানারের করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন ধরনের আরো একটি জটিলতা তৈরি করেছে। এই কারণে বিএনপিকে এখন এই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রার্থীকে জয়ী করে আনার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে। আর এটা করতে গিয়ে তারা আন্দোলনের জন্য যেভাবে এগুতে চাইছিলেন সেটা সম্ভব হবে না। আন্দোলনের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র আরো জানায়, সরকার যত কৌশলই করুক না কেন স্থানীয় পর্যায়ে দলের আধিপত্য ধরে রাখতে হবে। না হলে এর আগে সকল আন্দোলনে বিএনপি ঢাকার বাইরে সাফল্য দেখাতে পারলেও আগামী আন্দোলনে সেটাও পারবে না। তা না পারলে বিএনপির আন্দোলনও ২০১৩ ও ২০১৫ সালের মতো আবারও মুখ থুবড়ে পড়বে। ব্যর্থতায় পরিণত হবে। সরকারের পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। সেই হিসাবে খালেদা জিয়া তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই এই ব্যাপারে করনীয় উপায় বের করবেন। তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট একজন উপদেষ্টা বলেন, সরকার ও পুলিশ যেভাবে আমাদের নেতা কর্মীদের নানা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। কোন কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছে না এমনকি নেতারা বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনও এখন ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় পুলিশ কোন কাজ করতে না দেওয়ায়, কাউন্সিলের জন্য হল ভাড়া না দেওয়ার কারণে বিএনপি ওই সব কমিটিগুলো করার জন্য বিকল্পও উপায় বের করেছে। সেটা করতেও সময় লাগবে আরো কয়েকমাস। এই অবস্থায় বিএনপি আগামী ৫ জানুয়ারির আগে দল সুসংগঠিত করে নতুন করে আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে মনে করছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। বিএনপির সূত্র জানায়, দল গুছিয়ে আনা নিয়ে বিএনপি সমস্যায় রয়েছে এরমধ্যে সরকার আগামী সিটি কর্পোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা বিএনপি আপাতত মেনে নিতে না পারলেও তাদেরকে দলের নেতাদের ও মাঠের নেতাদের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নির্বাচনে যেতে হবে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি যাতে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী হতে না পারে ও নতুন করে সংগঠিত হতে না পারে সেই চেষ্টা চলছে সরকারের তরফ থেকে। এই চেষ্টা করার জন্য বিএনপির মাঠের ও দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলকে কাজে লাগাতে চাইছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে আগামী নির্বাচনগুলোকে বিএনপিকে দলীয়ভাবে প্রার্থী দিতে হবে। আর সেটা দিতে গেলে বিএনপির জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন নেতাই মনোনয়নে অযোগ্য হতে পারেন। কারণ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কোন কোন নেতার ভূমিকা কি , তা বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তা দিলেই বাদ পড়ে যাবেন অনেক সুবিধাবাদী নেতা। সেটা হলে ওই সব নেতারা স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ নাও করতে পারেন। তাদের কেউ কেউ আবার নিজেরাই মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হতে পারেন। সেটা হলে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাকে জয়ী করে আনার জন্য তারা চেষ্টা না করলে ও বিরোধিতা করলে বিএনপির একাধিক প্রার্থী পরাজিত হতে পারেন। সেটা হলে বিএনপির জয় ব্যাহত হতে পারে। এতে করে মাঠে ভাল অবস্থান থাকার পরও বিএনপি ভাল করতে পারবে না। স্থানীয় নির্বাচন থেকেই দলের কোন্দল ও বিভেদ আরো প্রকাশ পাবে। সেটা প্রকাশ হলে দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলাও তৈরি হতে পারে। সূত্র জানায়, দলের কোন্দল প্রকাশ পেয়ে ও আগামী বছরের প্রথম ছয় মাস স্থানীয় নির্বাচনে ব্যয় হলে নতুন করে তারা সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। এতে করে আবারও পিছিয়ে যেতে পারে আন্দোলনের সময়। সূত্র জানায়, সরকার নতুন করে বিএনপির জন্য ফাঁদ পেতেছে। বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকাশ, দলের বিদ্রোহী গ্র“পকে কাজে লাগানো ও যারা বিএনপি ছেড়ে সরকারি দলে যেতে চায় তাদেরকেও নিতে চায়। এটা হলে নতুন একটা সংকট তৈরি হবে। এই ব্যাপারে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকার আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে তারা কয়েকটি ছাড়া সব জায়গাতেই জয় নিয়ে নিবে। সেটা হলে বিএনপির ঘুরে দাড়াঁনো কঠিন হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আজম খান বলেন, বিএনপিকে ও এই জোটকে কোনঠাসা করতেই সরকার দলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচন বর্জন করলে মাঠে নেতাদের মধ্যে হতাশা আরো বাড়বে। দল নির্বাচন না গেলে দলের যেসব নেতারা এতদিন ধরে মাঠে রয়েছেন আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। স্থানীয় আধিপত্য রক্ষা করার জন্য তখন কেউ কেউ দল নির্বাচনে না গেলে তারা অংশ নিবে। সেটা একবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলে এরপর দলের হাইকমান্ডের কথা তারা শুনতে চাইবে না। চেইন অব কমান্ডেও সমস্যা তৈরি হবে। এছাড়াও দলীয় কোন্দল আরো বাড়বে। নিজ দলের একাধিক প্রার্থী হবে একই নির্বাচনী এলাকায়। সেটা হলে বিএনপি প্রার্থীকে জয়ী করে আনানো কঠিন হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এখানে একটা কঠিন সংকট হবে। আর এরমধ্যে সরকার যদি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মতো ভোটের সিল মারিয়ে নেয় তাহলে পরিকল্পিতভাবেই আমাদের প্রার্থীকে হারানো হবে। সেটা হলে যেসব জনগণ ভোট দিতে চায় তারা ভোট দিতে যাবে না। সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দল গুছানো দুটোই এক সঙ্গে করতে হবে। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া এটাই চাইছেন স্থানীয় নির্বাচনে দল যাকেই মনোনয়ন দিবে সবাই মিলে তারপক্ষে কাজ করে তাকে জয়ী করে আনতে হবে। এর বাইরে কেউ যদি কাজ করে কিংবা প্রার্থী হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর